তিন দশকে পা দিতে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। অথচ এত সময়েও আন্তর্জাতিক কোনো বড় ট্রফির দেখা মেলেনি লাল–সবুজের প্রতিনিধিদের।
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠাও এখনো অধরাই রয়ে গেছে। অর্জনের খাতাটা যেমন ফাঁকা, তেমনি এই সময়জুড়ে নানা বিতর্ক ও কালো অধ্যায়ের সাক্ষী থেকেছে দেশের ক্রিকেট ইতিহাস।
চলুন দেখে নেওয়া যাক, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ঘটে যাওয়া সেই কালো অধ্যায়গুলোর কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা—
আশরাফুলের ফিক্সিং কেলেঙ্কারি (২০১৪)
২০০১ সালে ওয়ানডে অভিষেকের মধ্য দিয়ে জাতীয় দলে জায়গা করে নেন মোহাম্মদ আশরাফুল। সময়ের সঙ্গে হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক উজ্জ্বল মুখ। ২০০৭ সালের টি–টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ২০ বলে ফিফটি করে আলোচনায় আসেন তিনি। পরবর্তীতে বিপিএলের প্রথম দুটি আসরে দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ঢাকাকে চ্যাম্পিয়ন করেও সবার নজর কাড়েন।
কিন্তু ২০১৩ সালের বিপিএলেই সামনে আসে বড় এক কলঙ্ক—স্পট ফিক্সিংয়ের অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন আশরাফুল। দেশের প্রথম ক্রিকেট পোস্টারবয় হিসেবে যাকে নিয়ে এত আশা ছিল, সেই তারকার এমন ঘটনায় হতবাক হয়ে পড়ে পুরো জাতি।
শুরুতে আট বছরের নিষেধাজ্ঞা পেলেও আপিলের পর শাস্তি কমে পাঁচ বছরে দাঁড়ায়, যার মধ্যে দুই বছর ছিল স্থগিত। সেই ঘটনার পর থেকে আর আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেননি আশরাফুল।
সাকিবের নিষেধাজ্ঞা: গোপন প্রস্তাবের মূল্য (২০১৯)
২০০৬ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেকের পর থেকেই একের পর এক রেকর্ড গড়ে চলেন সাকিব আল হাসান। তিন ফরম্যাটেই বিশ্বের সেরা অলরাউন্ডার হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেন তিনি। আইপিএলেও ছিলেন নিয়মিত মুখ, কলকাতা নাইট রাইডার্সকে দুটি শিরোপা জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
তবে ২০১৯ সালে বড় ধাক্কা আসে তাঁর ক্যারিয়ারে। ২০১৮ সালের আইপিএলে জুয়াড়ির কাছ থেকে প্রস্তাব পেয়েও তা আইসিসিকে না জানানোয় দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন তিনি। দোষ স্বীকার করায় এক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়।
দেশের সবচেয়ে সফল ক্রীড়াবিদের এমন ঘটনায় ভেঙে পড়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু সাকিব ফিরে এসে আবারও প্রমাণ করেছেন তাঁর মানসিক দৃঢ়তা ও প্রতিভা—যে কারণে আবারও ফিরে পেয়েছেন নিজের জায়গা।
স্ট্যাম্পে লাথি ও রাগের বিস্ফোরণ (২০২১)
নিষেধাজ্ঞা শেষে মাঠে ফেরার অল্প কিছুদিন পরই আবারও বিতর্কে নাম লেখান সাকিব আল হাসান। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচে এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া না পেয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান তিনি। মাঠেই রাগে লাথি মেরে ভেঙে ফেলেন স্ট্যাম্প।
পরের ওভারেও আম্পায়ার খেলা বন্ধ করার ঘোষণা দিলে হাতে স্ট্যাম্প তুলে ছুড়ে ফেলেন সাকিব। পুরো ঘটনা মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায়। অনেকেই তাঁর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক মাধ্যমে। শেষ পর্যন্ত শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় সাকিবকে।
জাহানারার যৌন হয়রানির অভিযোগে আলোড়ন (২০২৫)
সবশেষ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন নারী দলের সাবেক অধিনায়ক জাহানারা আলম। তিনি জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু এবং নারী বিভাগের প্রয়াত ইনচার্জ তৌহিদ মাহমুদের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ এনেছেন।
এক সাক্ষাৎকারে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহানারা জানান, নির্বাচক মঞ্জু একাধিকবার তাঁর প্রতি অনৈতিক আচরণ করেছেন। “উনি একদিন আমার কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললেন, পিরিয়ড কবে শেষ হবে—তখন আমাকে দেখা দরকার,”—এই বক্তব্যেই নড়েচড়ে বসে গোটা ক্রীড়াঙ্গন।
ঘটনার পর বিসিবি তদন্ত কমিটি গঠন করলেও তামিম, মাশরাফী ও মুশফিকদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা সরকারি পর্যায়ে তদন্তের দাবি তুলেছেন। এই ঘটনায় নারী ক্রিকেটারদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগও বেড়েছে।
তিন দশকের ক্রিকেটযাত্রা যেখানে একদিকে অনুপ্রেরণার গল্পে ভরপুর, সেখানে এমন বিতর্ক আর অন্ধকার অধ্যায়গুলো এখনো মনে করিয়ে দেয়—বাংলাদেশ ক্রিকেটের পথচলা কখনোই সহজ ছিল না।

































