স্নিকো নিয়ে প্রশ্ন, আইসিসিকে দায়ী করলেন স্টার্ক

স্নিকো নিয়ে প্রশ্ন, আইসিসিকে দায়ী করলেন স্টার্ক ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০৩:০৪, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

অ্যাডিলেডে অ্যাশেজ টেস্টে জয় আর সিরিজে এগিয়ে যাওয়ার আনন্দ থাকলেও অস্ট্রেলিয়ার ড্রেসিংরুমে তখন ভিন্ন এক অস্বস্তির আবহ। ম্যাচের ফল বদলায়নি ঠিকই, কিন্তু বড় প্রশ্ন উঠে এসেছে আম্পায়ারিং প্রযুক্তির নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে।

একের পর এক বিতর্কিত সিদ্ধান্ত, অস্পষ্ট ও বিভ্রান্তিকর স্নিকো গ্রাফ—সব মিলিয়ে ডিআরএসের ওপর আস্থা নড়ে গেছে। আর সেই প্রশ্নই এবার প্রকাশ্যে তুললেন অস্ট্রেলিয়ার তারকা পেসার মিচেল স্টার্ক।

অ্যাডিলেড টেস্টে ৮২ রানের জয় পেয়ে অ্যাশেজে ৩–০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচ শেষে স্টার্ক স্পষ্ট ভাষায় জানান, প্রযুক্তি ব্যবহারে এমন অসঙ্গতি আর গ্রহণযোগ্য নয় এবং এর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না আইসিসি। তার বক্তব্যে বোঝা যায়, বিষয়টি শুধু একটি ম্যাচ বা একটি সিদ্ধান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়—এটি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সামগ্রিক বিশ্বাসযোগ্যতার সঙ্গে জড়িত।

স্টার্কের প্রশ্নটি ছিল সরল, কিন্তু গভীর তাৎপর্যপূর্ণ—আম্পায়াররা যখন প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, তখন সেই প্রযুক্তির খরচ ও মান নিশ্চিত করার দায়িত্ব কেন আইসিসি নেবে না? তার মতে, এই সমস্যায় শুধু খেলোয়াড়রাই নয়, দর্শক, আম্পায়ার এবং সম্প্রচারকারীরাও সমানভাবে বিভ্রান্ত ও বিরক্ত।

স্টার্ক আরও বলেন, সব সিরিজে যদি একই মানের ও একই ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করা হতো, তাহলে এত প্রশ্ন আর বিতর্ক তৈরি হতো না। এক জায়গায় এক নিয়ম, আরেক জায়গায় আরেক নিয়ম—এই দ্বৈততা থেকেই বিভ্রান্তির জন্ম হচ্ছে বলে মনে করেন তিনি।

অ্যাডিলেড টেস্টে রিয়েল টাইম স্নিকো ব্যবহারের সময় একাধিক সিদ্ধান্ত নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়। এমনকি মাঠে থাকা অবস্থায় স্টার্ক নিজেও স্টাম্প মাইকে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করেন। একপর্যায়ে তাকে স্নিকোকে ‘সবচেয়ে বাজে প্রযুক্তি’ বলতেও শোনা যায়। ‘Snicko needs to be sacked’—এই মন্তব্য দ্রুতই ক্রিকেটবিশ্বে আলোচনার জন্ম দেয়।

বর্তমানে আইসিসি অনুমোদিত এজ-ডিটেকশন প্রযুক্তি দুটি—স্নিকো ও আল্ট্রা এজ। অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে ব্যবহৃত হয় স্নিকো, আর ভারত, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকায় চালু রয়েছে আল্ট্রা এজ। এখানেই মূল সমস্যার শিকড়—একই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্ন মানের প্রযুক্তি ব্যবহার।

এই বিতর্কে স্টার্ক একা নন। সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক রিকি পন্টিং অ্যাডিলেড টেস্ট চলাকালেই সরাসরি মন্তব্য করেন, স্নিকোর ওপর আম্পায়ারদের নিজেদেরই পূর্ণ আস্থা নেই। টেলিভিশন বিশ্লেষণে পন্টিং বলেন, এই প্রযুক্তি অন্য দেশগুলোতে ব্যবহৃত ব্যবস্থার মতো কার্যকর নয়। তার মতে, আম্পায়ারদের জিজ্ঞেস করলেই বোঝা যাবে—তারাও এটাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করেন না।

অস্ট্রেলিয়ার বর্তমান অধিনায়ক প্যাট কামিন্সও একই ধরনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার বক্তব্য, বিদেশের মাঠে যে আল্ট্রা এজ দেখা যায়, অ্যাডিলেডে ব্যবহৃত স্নিকো তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। কামিন্স বলেন, সিদ্ধান্তগুলো অনেক সময় ধারাবাহিক মনে হয় না—ব্যাটিং করলে সন্দেহ তৈরি হয়, আর বোলিং করলে আশায় থাকতে হয়।

ডিআরএস চালু হয়েছিল ক্রিকেটে বিতর্ক কমানোর জন্য। কিন্তু প্রযুক্তির মান ও ব্যবহারে যদি এই বৈষম্য থেকেই যায়, তাহলে সেই মূল উদ্দেশ্যই প্রশ্নের মুখে পড়ে। স্টার্কের বক্তব্যে তাই শুধু ক্ষোভ নয়, আছে স্পষ্ট বার্তা—আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রযুক্তির দায়িত্ব, মান ও একরূপতা নিশ্চিত করতে হবে আইসিসিকেই। অন্যথায় ধীরে ধীরে আস্থার জায়গাটি ক্ষয়ে যেতে থাকবে।

অ্যাশেজের ফলাফলে কোনো পরিবর্তন না এলেও, অ্যাডিলেড টেস্ট হয়তো ভবিষ্যতের বড় পরিবর্তনের সূচনা করে দিল। এখন প্রশ্নটা আর শুধু ‘আউট না নট আউট’ নয়, বরং—‘কোন প্রযুক্তির ওপর ভর করে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে?’

শেয়ার করুনঃ
Advertisement