এটি অত্যন্ত পরিচিত ও প্রায় সবারই অভিজ্ঞ একটি সমস্যা। অনেকদিন আলমারিতে বা তাকের ওপর তুলে রাখার পর হঠাৎ করে প্রিয় চামড়ার জুতা জোড়া বের করে দেখা যায়—চামড়া শক্ত হয়ে গেছে, কোথাও কোথাও অপ্রত্যাশিতভাবে ফাটলও ধরেছে। বিষয়টি বিরক্তিকর হলেও এর পেছনে রয়েছে একেবারে স্বাভাবিক কিছু কারণ।
চামড়া মূলত একটি প্রাকৃতিক উপাদান। মানুষের ত্বকের মতোই এতে প্রাকৃতিক তেল ও আর্দ্রতা থাকে, যা চামড়াকে নরম, নমনীয় ও টেকসই করে রাখে। কিন্তু নিয়মিত ব্যবহার ও যত্ন না পেলে এই প্রাকৃতিক তেল ধীরে ধীরে শুকিয়ে যেতে শুরু করে। দীর্ঘদিন জুতা না পরা হলে এবং বাতাস চলাচলের সুযোগ না পেলে চামড়ার ভেতরের আর্দ্রতা কমে যায়। এর ফলেই চামড়া নিষ্প্রাণ, শক্ত ও ভঙ্গুর হয়ে ওঠে এবং একসময় ফাটল দেখা দেয়।
শুধু তাই নয়, জুতা সংরক্ষণের পরিবেশও বড় ভূমিকা রাখে। অতিরিক্ত শুষ্ক পরিবেশে চামড়ার আর্দ্রতা দ্রুত হারিয়ে যায়, আবার খুব স্যাঁতসেঁতে জায়গায় রাখলে ছত্রাক বা ফাঙ্গাস ধরার ঝুঁকি তৈরি হয়। দুই ক্ষেত্রেই চামড়ার ক্ষতি হয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয় ধুলাবালি—জুতার ওপর জমে থাকা ধুলো চামড়ার উপরের স্তরকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয়, ফলে ফাটল ধরার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়।
চামড়ার জুতা দীর্ঘদিন ভালো রাখতে কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পরিচর্যা মেনে চলা দরকার।
প্রথমত, জুতা সংরক্ষণে তোলার আগে অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। নরম শুকনো কাপড় দিয়ে জুতার গা মুছে ধুলোবালি তুলে নেওয়াই সবচেয়ে ভালো। প্রয়োজন হলে হালকা ভেজা কাপড় ব্যবহার করা যেতে পারে, তবে মনে রাখতে হবে—ভেজা অবস্থায় কখনোই জুতা তুলে রাখা উচিত নয়। ভালোভাবে শুকিয়ে নেওয়ার পরই তা সংরক্ষণে রাখুন।
চামড়ার স্বাভাবিক নমনীয়তা বজায় রাখতে মাসে অন্তত একবার লেদার কন্ডিশনার বা ভালো মানের সু-পলিশ ব্যবহার করা খুবই জরুরি। এই কন্ডিশনিংয়ের মাধ্যমে চামড়ার হারানো প্রাকৃতিক তেল আবার ফিরে আসে, ফলে জুতা নরম থাকে এবং ফাটল ধরার ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়।
সংরক্ষণের ক্ষেত্রে বড় একটি ভুল হলো প্লাস্টিকের ব্যাগে জুতা মুড়ে রাখা। প্লাস্টিক বাতাস চলাচল বন্ধ করে দেয়, যা চামড়ার জন্য ক্ষতিকর। এর পরিবর্তে তুলা বা কাপড়ের তৈরি সু-ব্যাগ ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। এতে জুতা যেমন ধুলো থেকে সুরক্ষিত থাকে, তেমনি বাতাস চলাচলের সুযোগও পায়।
জুতার আকৃতি ঠিক রাখতে ভেতরে সু-ট্রি ব্যবহার করা ভালো। সু-ট্রি না থাকলে পরিষ্কার কাগজ ভরে রাখলেও চলবে। এতে জুতা বসে যাওয়া বা ভাঁজ পড়ার সম্ভাবনা কমে।
এ ছাড়া জুতা রাখার জায়গার আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলমারি বা শেলফে জুতার পাশে সিলিকা জেল রাখলে অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ হয়। চাইলে প্রাকৃতিক উপায় হিসেবে নিমপাতাও ব্যবহার করা যেতে পারে, যা আর্দ্রতা ও পোকামাকড়—দুই থেকেই সুরক্ষা দেয়।
সবশেষে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—দীর্ঘদিন জুতা না পরলেও মাসে অন্তত একবার তা বের করে হালকা রোদ ও বাতাসে রাখা উচিত। তবে খেয়াল রাখতে হবে, কখনোই কড়া বা তীব্র রোদে সরাসরি জুতা রাখবেন না। এতে চামড়া আরও শক্ত হয়ে যেতে পারে। মৃদু রোদ আর বাতাসই চামড়ার জন্য সবচেয়ে উপকারী।
এই ছোট ছোট যত্নই আপনার প্রিয় চামড়ার জুতাকে দীর্ঘদিন নরম, ঝকঝকে ও ব্যবহারযোগ্য করে রাখতে সাহায্য করবে

































