শিক্ষক লাঞ্ছনার জেরে কর্মবিরতি, আড়ালে কি রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র?

শিক্ষক লাঞ্ছনার জেরে কর্মবিরতি, আড়ালে কি রাকসু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র? ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৫:৫০, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাস জুড়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এরই মাঝে আসন্ন রাকসু, হল সংসদ ও সিনেট নির্বাচন সামনে রেখে শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন। ফলে দীর্ঘ ৩৫ বছর পর হতে যাওয়া ঐতিহাসিক রাকসু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে রাকসু নির্বাচন। ছাত্রসংগঠন ও প্রার্থীরা ভোটারদের মনোযোগ কাড়তে ব্যস্ত থাকলেও হঠাৎ শিক্ষকের লাঞ্ছনার ঘটনা নতুন অস্থিরতা তৈরি করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মনে করছেন, ঘটনাটি আসলে রাকসু নির্বাচন বানচালের একটি কৌশল হতে পারে।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনাকে হাতিয়ার বানিয়ে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারী। তবে এর পেছনে রাকসুকে কেন্দ্র করে পূর্বপরিকল্পিত বিশৃঙ্খলা তৈরির ইঙ্গিত দেখছেন বিশ্লেষকরা।

এর আগে উপাচার্যের বাসভবনে অনুষ্ঠিত জরুরি সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন এবং পোষ্য কোটা বাতিল না করে সাময়িক স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে এ সিদ্ধান্তেও আস্থা রাখতে পারেননি আন্দোলনরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা। তাদের দাবি, সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীদের দ্রুত শাস্তি ও পোষ্য কোটা পুনর্বহাল করতে হবে।

কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে কমপ্লিট শাটডাউনের ঘোষণা এলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তাদের কাছে কোনো আনুষ্ঠানিক নির্দেশনা পৌঁছেনি। ফলে তারা নিয়মমাফিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। এতে প্রশ্ন উঠছে—আসলেই কারা এই আন্দোলনের পেছনে, এবং এর মূল উদ্দেশ্য কী?

অফিসার সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোক্তার হোসেন অবশ্য জানান, সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্তে তারা হতাশ হয়েছেন। তিনি বলেন, তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা নেই, এবং দ্রুত দায়ী শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, রাকসু যথাসময়ে হবে, নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে না।

কর্মবিরতির কারণে বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। রুটিন ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকলেও রাকসু নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

রাকসুর প্রার্থীরা বলছেন, আন্দোলনের মূল লক্ষ্য শিক্ষার্থীদের মনে আতঙ্ক ঢুকিয়ে তাদের বাসায় পাঠানো, যাতে নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট হয়। কেউ কেউ সরাসরি অভিযোগ তুলছেন এটি রাকসু বানচালের অপচেষ্টা।

অন্যদিকে, বামপন্থী প্রার্থী ফুয়াদ রাতুল জানান, রাকসু নির্বাচনের তফসিল পিছানো হলে আগেভাগেই জানাতে হবে, নইলে শিক্ষার্থীরা ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখবে। ছাত্রশিবির সমর্থিত প্রার্থীরাও একই সুরে বলেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের আন্দোলন আসলে রাকসু বানচাল কেন্দ্রিক।

তবে ইউট্যাবের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন বাবু বলেন, তাদের আন্দোলন কেবল শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনার বিচার নিয়েই। রাকসুর সাথে এ আন্দোলনের সম্পর্ক নেই।

প্রধান নির্বাচন কমিশনারও স্বীকার করেছেন, কমপ্লিট শাটডাউনের কারণে অনেক শিক্ষার্থী বাসায় চলে যাচ্ছেন, যা উদ্বেগজনক। তবুও তিনি জানিয়েছেন, কমিশন নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাচ্ছে।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement