যেভাবে হত্যা করা হয় মা-মেয়েকে

যেভাবে হত্যা করা হয় মা-মেয়েকে ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৩:২২, ৯ ডিসেম্বর ২০২৫

আজিজুর রহমান—ঢাকার উত্তরার সানবিমস স্কুলের একজন পদার্থবিজ্ঞানের শিক্ষক। গ্রামের বাড়ি নাটোর সদর উপজেলায়। ২০১২ সাল থেকে পরিবার নিয়ে তিনি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে একটি বহুতল ভবনের অষ্টম তলায় নিজের ফ্ল্যাটে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন।

বহু বছর ধরে স্বাভাবিক ও সুখের জীবন কাটানোর পর হঠাৎ সোমবার তার জীবনে নেমে আসে ভয়াবহ বিপর্যয়। সেদিন নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় তার স্ত্রী লায়লা আফরোজ এবং তাদের মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে।

পুলিশের ধারণা, মাত্র চার দিন আগে অস্থায়ী গৃহকর্মী হিসেবে কাজে যোগ দেওয়া আয়েশাই এই খুনের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার সকাল ৭টা ৫২ মিনিটে আয়েশা কালো বোরকা পরে ফ্ল্যাটে প্রবেশ করছে। এরপর সকাল ৯টা ৩৬ মিনিটে স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে তাকে বের হতে দেখা যায়। ঘটনার পর থেকেই সে পলাতক।

আজিজুল রহমান জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো সোমবার সকাল ৭টার দিকে তিনি স্কুলে বের হন। পরীক্ষা চলার কারণে সে দিন স্বাভাবিকের চেয়ে দ্রুতই বাসায় ফেরেন। দুপুর ১১টার পর বাসায় ঢুকে প্রথমেই মেয়ের রক্তাক্ত দেহ দেখতে পান। পরে রান্নাঘরে গিয়ে স্ত্রীর নিথর দেহ আবিষ্কার করেন।

তদন্তকারী একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাসা তল্লাশির সময় বাথরুম থেকে একটি চাইনিজ সুইচ গিয়ার এবং একটি ধারালো ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই অস্ত্রগুলো দিয়েই মা–মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে।

সুরতহাল রিপোর্টে দেখা যায়, নিহত লায়লা আফরোজার শরীরজুড়ে রয়েছে প্রায় ৩০টি আঘাতের চিহ্ন। আর ১৫ বছর বয়সী নাফিসার গলায় চারটি গভীর ক্ষত পাওয়া গেছে। আফরোজার বাম গালে ৩টি, থুতনিতে ৪টি, গলার নিচের বাম পাশে ৫টি, বাম হাতে ৩টি, বাম কব্জিতে ১টি, ডান কব্জিতে ২টি, বুকে বাম পাশে ৯টি, পেটের বাম দিকে ২টি ও তলপেটের নিচে ১টি ক্ষত পাওয়া গেছে। অন্যদিকে নাফিসার বুকের দুই পাশে চারটি গভীর আঘাতের চিহ্ন ছিল। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে দুজনের মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সাম্প্রতিক সময়ে এমন ভয়াবহ সুরতহাল তারা খুব কমই দেখেছেন। হত্যা পদ্ধতির নৃশংসতা দেখে তারা মনে করছেন, হামলাকারী কোনোভাবে প্রশিক্ষিত হতে পারে।

তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে এবং সেগুলো যাচাই করা হচ্ছে। সিসিটিভি ফুটেজ খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে, হত্যার আগ-পরে সন্দেহভাজনের উপস্থিতি ও আচরণ বিশ্লেষণ করে পরবর্তী তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হবে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement