মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে খুনে গৃহকর্মীর পরিচয় মিলল

মোহাম্মদপুরে মা–মেয়ে খুনে গৃহকর্মীর পরিচয় মিলল ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১২:১৫, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা–মেয়েকে নির্মমভাবে ছুরিকাঘাতে হত্যার ঘটনায় শুরু থেকেই সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত গৃহকর্মী ‘আয়েশা’র সত্যিকারের পরিচয় অবশেষে শনাক্ত করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

তার প্রকৃত নাম, পরিচয় ও স্বামীর তথ্য এখন পুলিশের হাতে রয়েছে বলে একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে। তবে গতকাল মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত তাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

তদন্ত কর্মকর্তাদের ভাষ্য—অভিযুক্ত তরুণীকে আটক করতে পারলেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ও পেছনের কারণ পরিষ্কার হবে।

সোমবার সকালেই শাহজাহান রোডের সাততলা ভবনের একটি ফ্ল্যাট থেকে উদ্ধার করা হয় ৪৮ বছর বয়সী লায়লা আফরোজ এবং নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিয়ার লাশ। পরিবারের অভিযোগ, মাত্র চার দিন আগে ‘আয়েশা’ নামে যাকে গৃহকর্মী হিসেবে কাজে রাখা হয়েছিল, তিনিই এই হত্যাচক্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। ঘটনার পরপরই সে উধাও হয়ে যায়।

মামলার এজাহার অনুযায়ী, হত্যার পর বাসা থেকে অদৃশ্য হয়ে গেছে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ, বিভিন্ন স্বর্ণালংকার ও কিছু নগদ টাকা। পুলিশ ধারণা করছে, হত্যার পর লুটপাটও ঘটেছে।

ভবনের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সকাল ৭টা ৫১ মিনিটে কাজে ঢোকার পর প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা পর, সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে যাচ্ছে ওই তরুণী।

আরও পড়ুন: যেভাবে হত্যা করা হয় মা-মেয়েকে

সব সময় বোরকা পরায় তার মুখ পরিষ্কারভাবে ক্যামেরায় ধরা না পড়ায় পুলিশকে ছাড় দিতে হয়েছে দীর্ঘ ম্যানুয়াল যাচাই–বাছাইয়ের ওপর। আশপাশের অনেক সিসিটিভি ক্যামেরা বন্ধ থাকায় তার পালানোর পথ পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত করতেও জটিলতা তৈরি হয়।

আরও পড়ুন : মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হত্যা, গৃহকর্মী আসামি

তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আয়েশা নামে যে পরিচয় দিয়ে সে কাজে যোগ দিয়েছিল, সেটি সম্পূর্ণ ভুয়া। বাড়ির গেট ছাড়তেই সে ভুক্তভোগী পরিবারের মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয় এবং কাজ নেওয়ার পর থেকে পরিবারের কারও সঙ্গে কোনো ফোনালাপও করেনি—যা ঘটনাটিকে আরও রহস্যময় করেছে।

হত্যার পর নিহত লায়লা আফরোজের স্বামী, পেশায় একজন স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম, মোহাম্মদপুর থানায় ওই গৃহকর্মীকেই একমাত্র আসামি উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। তিনি জানান, সকালে স্কুলে যাওয়ার পর স্ত্রীকে ফোনে পাচ্ছিলেন না। বাসায় ফিরে তিনি স্ত্রী ও মেয়েকে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে হতবাক হয়ে যান।

আরও পড়ুন: মা–মেয়ে হত্যা: গৃহকর্মী কি প্রশিক্ষিত কিলার?

সুরতহাল রিপোর্টে যে নির্মমতার চিত্র উঠে এসেছে, তা আরও শিউরে ওঠার মতো। লায়লা আফরোজের শরীরে প্রায় ৩০টি ছুরিকাঘাত এবং নাফিসার দেহে চারটি ছুরিকাঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত শেষে মা–মেয়ের মরদেহ নাটোর পৌরসভার দক্ষিণ বড়গাছা এলাকায় দাফন সম্পন্ন হয়।

মোহাম্মদপুর থানার ওসি মেজবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন, হত্যার মোটিভ বা উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়। তবে প্রধান সন্দেহভাজন গৃহকর্মীকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন দল একযোগে কাজ করছে এবং তাকে ধরতে পুলিশ সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement