মাছ লুটের অভিযোগে বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা, এবার কলেজ সভাপতির আসনে

মাছ লুটের অভিযোগে বহিষ্কৃত ছাত্রদল নেতা, এবার কলেজ সভাপতির আসনে ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২০:০১, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

রাজশাহীর বাগমারায় আলোচনায় এসেছে নতুন বিতর্ক। পুকুরের মাছ লুট, চাঁদাবাজি এবং স্থানীয়দের ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো গুরুতর অভিযোগে যিনি একসময় উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন, সেই মহব্বত হোসেনকে সম্প্রতি মোহনগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকার গত ৭ সেপ্টেম্বর এ–সংক্রান্ত একটি চিঠিতে স্বাক্ষর করেন।

এর আগে কলেজটির পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ছিলেন জেলা যুবদলের সদস্যসচিব রেজাউল করিম টুটুল। অভিযোগ উঠেছে, তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শেষ পর্যন্ত টুটুলের ঘনিষ্ঠ মহব্বত হোসেনকে সভাপতি হিসেবে মনোনীত করেছে। বিষয়টি স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়— বর্তমান সভাপতি রেজাউল করিম দায়িত্ব পালনে ‘অক্ষমতা প্রকাশ করায়’ তাঁর পরিবর্তে মহব্বত হোসেনকে সভাপতি করা হয়েছে।

কিন্তু মহব্বত হোসেনের অতীত নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার পোড়াকয়া গ্রামের মাছচাষি রুবেল হকের কাছ থেকে জোরপূর্বক মাছ লুটের ঘটনায় গত বছর ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ জমা হয়। পরে তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ১৯ অক্টোবর তাঁকে শুধু আহ্বায়কের পদ থেকেই নয়, ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এর আগেই, ২০২২ সালের অক্টোবরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক অতিরিক্ত সচিব সুলতান মাহমুদকে সভাপতি করে কলেজ পরিচালনা কমিটির একটি অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছিল। কিন্তু এ কমিটির মেয়াদ থাকা অবস্থায় ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে সুলতান মাহমুদকে সরিয়ে যুবদল নেতা রেজাউল করিম টুটুলকে সভাপতি পদে বসানো হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়েই টুটুল সুলতান মাহমুদকে সরাতে সক্ষম হন।

পরে কয়েকজন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি ও অভিভাবক জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন যে, টুটুল আসলে প্যারামেডিকেল শিক্ষায়তন থেকে পড়াশোনা করেছেন, যা উচ্চমাধ্যমিক সমমানের সমান। তিনি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন কি না সে তথ্যও স্পষ্ট নয়। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী ছাড়া কেউ কলেজ কমিটির সভাপতি হতে পারেন না।

অভিযোগকারীদের একজন, উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান রাসেল বলেন, “পুকুরের মাছ লুটের অভিযোগে যিনি বহিষ্কৃত হয়েছেন, তাঁকেই আবার সভাপতি করা হয়েছে। এটি একটি গোষ্ঠীর স্বার্থসিদ্ধির জন্য নেওয়া সিদ্ধান্ত।”

সাবেক সভাপতি ও অবসরপ্রাপ্ত সচিব সুলতান মাহমুদ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির উন্নয়ন করতে চেয়েছিলাম। অথচ আমাকে না জানিয়েই সরিয়ে দেওয়া হলো। এখন মনে হচ্ছে, যোগ্য মানুষরা সত্যিই একা।”

অন্যদিকে টুটুলের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হলেও তিনি কোনো কাগজপত্র সাংবাদিকদের কাছে জমা দেননি। বরং সময়ক্ষেপণ শেষে শেষ পর্যন্ত সভাপতির পদ ছেড়ে দিয়ে মহব্বত হোসেনকে বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও টুটুল এবং নবনিযুক্ত সভাপতি মহব্বত দুজনের কারো সাথেই কথা বলা সম্ভব হয়নি।

এই বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে কলেজের উপাধ্যক্ষ নুরুল হুদাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তেজিত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে কথা বলুন। আমি কিছু বলব না।” জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ পরিদর্শক আব্দুল হাই সিদ্দিক সরকারের সাথেও একাধিকবার ফোন ও বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement