গাজামুখী ফ্লোটিলার যাত্রীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতন

গাজামুখী ফ্লোটিলার যাত্রীদের ওপর ইসরায়েলি বাহিনীর অমানবিক নির্যাতন ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৫:৫৯, ৬ অক্টোবর ২০২৫

ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে ‘গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা’র মাধ্যমে ত্রাণ নিয়ে গাজামুখী যাত্রা শুরু করেছিলেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীরা।

কিন্তু পথেই দখলদার ইসরায়েলি বাহিনী সেই অধিকারকর্মীদের আটক করে ভয়াবহ নির্যাতন চালিয়েছে। আটক অবস্থায় শুধু মারধরই নয়, দিনের পর দিন না খাইয়ে রাখা হয়েছে তাদের; এমনকি কেউ কেউ বাধ্য হয়ে টয়লেটের পানি পর্যন্ত পান করেছেন।

আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে (৫ অক্টোবর) মুক্তি পাওয়া ফ্লোটিলার সদস্যরা তাদের ওপর চালানো ভয়ংকর নির্যাতনের বিবরণ তুলে ধরেছেন।

অধিকারকর্মীদের অভিযোগ, ইসরায়েলি সেনারা তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা হাঁটু গেড়ে বসিয়ে রেখেছিল। শারীরিক নির্যাতনের পাশাপাশি দিন কয়েক ধরে কোনো খাবার বা পানি দেওয়া হয়নি। বাধ্য হয়ে বাঁচার তাগিদে টয়লেটের পানি পান করতে হয়েছে তাদের।

গত ১ থেকে ৩ অক্টোবরের মধ্যে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলায় অংশ নেওয়া প্রায় ৪৫০ জনকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলি বাহিনী। এই নৌবহরটি অবরুদ্ধ গাজায় প্রতীকী মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিতে যাচ্ছিল।

রোমের ফিউমিসিনো বিমানবন্দরে ফিরে এসে ইতালির অধিকারকর্মী সিজার তোফানি বলেন, “আমাদের সঙ্গে অকল্পনীয় আচরণ করা হয়েছে—অপমান, নির্যাতন ও হয়রানি।”

ইতালির ইসলামিক কমিউনিটির সভাপতি ইয়াসিন লাফ্রাম সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “তারা আমাদের দিকে অস্ত্র তাক করেছিল। এমন আচরণ কোনো সভ্য রাষ্ট্রের কাছ থেকে আশা করা যায় না।”

ইতালির সাংবাদিক সাভারিও টমাসি জানান, ইসরায়েলি সৈন্যরা ওষুধ আটকে রেখেছে এবং বন্দিদের সঙ্গে ‘অমানবিকভাবে’ ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, “তারা গ্রেটা থুনবার্গ, নেলসন ম্যান্ডেলার নাতি ম্যান্ডলা ম্যান্ডেলা ও ইউরোপীয় আইনপ্রণেতাদের নিয়েও হাসি-তামাশা করছিল।”

আরেক সাংবাদিক লরেঞ্জো ডি’আগোস্তিনো বলেন, “ইসরায়েলিরা আমার জিনিসপত্র ও অর্থ চুরি করেছে। কুকুর লেলিয়ে ভয় দেখিয়েছে, বন্দুকের লেজার লাইট তাক করে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।”

অধিকারকর্মী পাওলো ডি মন্টিস জানান, “আমাকে জিপ টাই দিয়ে বেঁধে ঘন্টার পর ঘন্টা একটি ভ্যানে আটকে রাখা হয়েছিল। মাথা তুলতে নিষেধ ছিল, একবার তাকাতেই মাথায় আঘাত করা হয়।”

মালয়েশিয়ার অভিনেত্রী ও গায়িকা দুই বোন হেলিজা ও হাজওয়ানি হেলমিও নির্যাতনের ভয়াবহতা বর্ণনা করেছেন। তারা বলেন, “আমরা না খেয়ে ছিলাম, বাধ্য হয়ে টয়লেটের পানি পান করেছি। অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিল, কিন্তু ইসরায়েলিরা বলছিল—‘মরে গেছে? না হলে সমস্যা নয়।’”

হেলিজা জানান, “আমি শেষবার ১ অক্টোবর খেয়েছিলাম। তিন দিন কিছু খাইনি, শুধু টয়লেটের পানি পান করেছি।”

পূর্বে মুক্তি পাওয়া কিছু অধিকারকর্মী জানিয়েছিলেন, ইসরায়েলি সেনারা জলবায়ু আন্দোলনকর্মী গ্রেটা থুনবার্গকেও টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যায়, ইসরায়েলি পতাকায় চুমু খাওয়ায় এবং প্রচারণার কাজে ব্যবহার করে।

এই পুরো ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করেছে, ফিলিস্তিনের পক্ষে কথা বললেই কী ভয়াবহ নির্যাতনের মুখে পড়তে হয় মানবতার পক্ষে দাঁড়ানো মানুষদের।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement