জুবায়েদ হত্যার আসল কারণ প্রকাশ, পুলিশ জানাল পুরো ঘটনা

জুবায়েদ হত্যার আসল কারণ প্রকাশ, পুলিশ জানাল পুরো ঘটনা ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৫:৩১, ২১ অক্টোবর ২০২৫

দুই দিনের অপেক্ষার পর অবশেষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইনকে হত্যার রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম এই চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করেন।

পুলিশ জানায়, জুবায়েদকে হত্যা করার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন তারই টিউশনির ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা। বর্ষা মূলত মাহীর রহমানের সঙ্গে প্রেমে থাকলেও, জুবায়েদের সঙ্গে পরিচয়ের পর তার প্রতি আকৃষ্ট হন। এই সম্পর্ক মাহীর জানতেন না। বর্ষা দুজনের সঙ্গে একই সময় প্রেমের সম্পর্ক রক্ষা করতেন।

যখন মাহীর এই বিষয়টি জানতে পারে, তখন বর্ষা তার সঙ্গে ব্রেকআপ করে। কিন্তু বর্ষা মাহীরকে ভুলতে পারেননি। কিছুদিন পর তিনি মাহীরকে জানান, জুবায়েদকে আর ভালো লাগে না। তখনই বর্ষা ও মাহীর মিলে জুবায়েদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। বর্ষা মাহীরকে বলেন, “জুবায়েদকে না মারলে তুমি আমাকে পাবা না।” এরপর ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে তারা পরিকল্পনা শুরু করেন। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নতুন দুটি সুইচ গিয়ার ও চাকু কেনা হয়, যা দিয়ে হামলা চালিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করা হয়।

অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার নজরুল ইসলাম বলেন, এই ঘটনা আলোচিত সেই মিন্নির ঘটনার মতো, যা ত্রিভুজ প্রেমের কাহিনী। হত্যার দিন বর্ষা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং পুরো হত্যাকাণ্ড পর্যবেক্ষণ করেছেন।

জুবায়েদ হত্যার ৪১ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) বংশাল থানায় মামলা দায়ের করেন তার ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত। মামলায় টিউশনের ছাত্রী বর্ষা ও প্রেমিক মাহীরসহ তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। এছাড়া ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০) এবং অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচ জনও অভিযুক্ত রয়েছেন।

মামলার এজাহারে জানা গেছে, জুবায়েদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশুনার পাশাপাশি টিউশন দিতেন। ১৯ অক্টোবর বিকেল সাড়ে চারটার দিকে তিনি বংশাল থানাধীন নুর বক্স লেনের রৌশান ভিলায় ছাত্রীকে পড়াতে যান। একই দিন সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটে তিনি তার ভাই সৈকতকে মেসেজে জানান, “স্যার খুন হয়ে গেছে। কে বা কারা তাকে খুন করছে।”

রাত সাড়ে ৮টার দিকে সৈকত ও তার শ্যালক শরীফ মোহাম্মদ ঘটনাস্থলে পৌঁছান। তৃতীয় তলার রুমের পূর্ব পাশে সিঁড়িতে রক্তাক্ত মরদেহ দেখতে পান। সুরতহাল প্রস্তুতির সময় তার গলার ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত ধরা পড়ে। স্থানীয় সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং উপস্থিত লোকজনের বর্ণনার ভিত্তিতে নিশ্চিত হয়, পূর্বপরিকল্পিতভাবে ধারালো অস্ত্র দিয়ে জুবায়েদকে হত্যা করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, জুবায়েদ এক বছর ধরে বাসায় গিয়ে বর্ষাকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি ও বায়োলজি পড়াতেন। বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন, আর নিহত জুবায়েদ কুমিল্লার হোমনার কৃষ্ণপুর গ্রামের মোবারক হোসেনের ছেলে।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই মেধাবী শিক্ষার্থীকে সোমবার রাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডটি বিশ্ববিদ্যালয়, শিক্ষার্থী সমাজ এবং এলাকাবাসীর মধ্যে গভীর শোক ও হতবাক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

   

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement