জোবায়েদের মৃত্যু নিশ্চিত করেই বাসায় ফেরে বর্ষা

Published : ১৬:৫৯, ২১ অক্টোবর ২০২৫
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদল নেতা জোবায়েদ হোসাইনের হত্যাকাণ্ডের চাঞ্চল্যকর তথ্য একে একে প্রকাশ পাচ্ছে।
পুলিশ বলছে, পুরো হত্যার ঘটনাই সামনে থেকে প্রত্যক্ষ করেছিলেন টিউশনির ছাত্রী বর্ষা। জোবায়েদের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পরই তিনি তৃতীয় তলা থেকে উঠে যান পঞ্চম তলায় নিজের বাসায়।
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে এ তথ্য জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান উদ্দিন সামী।
তিনি জানান, জোবায়েদ আহত অবস্থায় তখনও জীবিত ছিলেন। মৃত্যুর আগে তিনি শেষ চেষ্টা হিসেবে দোতলা থেকে উপরে উঠে আসেন। তিন তলায় দাঁড়িয়ে থাকা বর্ষাকে দেখে অনুরোধ করেন, “আমাকে বাঁচাও।” কিন্তু বর্ষার জবাব ছিল নির্মম—“তুমি না মরলে আমি মাহীরের হতে পারব না।” এরপর বর্ষা জোবায়েদের মৃত্যু নিশ্চিত করে যায়। আহত জোবায়েদ সিঁড়ির দরজায় নক করলেও আশপাশের কেউ সাড়া দেননি।
ডিসি মল্লিক বলেন, “মেয়েটি অনেক চতুর। একসঙ্গে দুই দিকেই সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল। ঘটনাটি আসলে একটি ত্রিভুজ প্রেমের ফল। বিষয়টি অনেকটা বরগুনার মিন্নি ঘটনার মতো।”
অন্যদিকে, বংশাল থানার ওসি রফিকুল ইসলাম জানান, “এটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হত্যা।” তিনি বলেন, বর্ষা ও মাহীরের নয় বছরের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু মাঝপথে বর্ষা জোবায়েদের প্রেমে জড়িয়ে পড়ে এবং মাহীরকে জানায় সে জোবায়েদকে পছন্দ করে। কিছুদিন পরেই বর্ষা আবার মন পরিবর্তন করে মাহীরকে বলে, “জোবায়েদকে আর ভালো লাগে না।” এরপরই দুজন মিলে পরিকল্পনা করে জোবায়েদকে হত্যা করার।
ওসি আরও জানান, প্রথমে হত্যার কথা অস্বীকার করলেও মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদের সময় মাহীর ও বর্ষা দুজনেই স্বীকারোক্তি দেন। গত ২৫ সেপ্টেম্বর থেকেই তারা হত্যার পরিকল্পনা শুরু করে এবং এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত বর্ষাসহ চারজনকে আটক করা হয়েছে।
জোবায়েদ হোসাইন ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। পাশাপাশি তিনি কুমিল্লা জেলা ছাত্রকল্যাণ পরিষদের সভাপতি এবং শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সদস্য ছিলেন।
অন্যদিকে, বর্ষা মহানগর মহিলা কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। এক বছর ধরে পুরান ঢাকার আরমানিটোলায় ১৫, নূরবক্স লেনের রৌশান ভিলায় বর্ষাকে পদার্থ, রসায়ন ও জীববিজ্ঞান পড়াতেন জোবায়েদ। বর্ষার বাবার নাম গিয়াসউদ্দিন।
গত ১৯ অক্টোবর বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে বর্ষার বাসায় পড়াতে গিয়ে সিঁড়ির কাছে খুন হন জোবায়েদ। হত্যার পর বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দ্রুত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বংশাল থানার সামনে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন এবং তাঁতীবাজার মোড় অবরোধ করে রাখেন।
সেদিন রাত ১১টার দিকে পুলিশ বর্ষাকে হেফাজতে নেয় এবং দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে আরমানিটোলার নূরবক্স লেনের বাসা থেকে থানায় নিয়ে আসে। পরদিন জোবায়েদের মরদেহ তার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার হোমনাতে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
বিডি/এএন