পুলিশের বিরুদ্ধে রিপোর্টে সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি

পুলিশের বিরুদ্ধে রিপোর্টে সাংবাদিককে দেখে নেওয়ার হুমকি ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:০৫, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

পুলিশের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ও তথ্যভিত্তিক সংবাদ প্রকাশ করায় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও রংপুর অফিস প্রধান বাদশাহ ওসমানীসহ স্থানীয় সাংবাদিকদের উদ্দেশে হুমকিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফত হোসাঈন—এমন অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় রংপুরের সাংবাদিক মহলে ব্যাপক ক্ষোভ ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

সাংবাদিকদের অভিযোগ, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে পুলিশের বিভিন্ন বিতর্কিত কর্মকাণ্ড—জনতার ওপর গুলি চালানো, হত্যা, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট পরিবর্তনের চাপসহ দেশবিরোধী নানা কর্মকাণ্ড—নিয়ে আমার দেশ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সাহসী ও তথ্যনির্ভর সংবাদ প্রকাশিত হচ্ছে। এসব প্রতিবেদন এখনো অব্যাহত রয়েছে। এসব প্রকাশনার জের ধরেই পুলিশ সুপার ক্ষুব্ধ হয়ে সাংবাদিকদের ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছেন বলে অভিযোগ করা হয়।

বাদশাহ ওসমানী জানান, চলতি মাসের ১১ ডিসেম্বর আমার দেশ অনলাইন–এ ‘ঘুষের টাকা না দেওয়ায় খুনের আসামি’ শিরোনামে গঙ্গাচড়া মডেল থানার এসআই উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। সংবাদটি প্রকাশের পর রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম বিষয়টি তদন্তের দায়িত্ব নবাগত পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনকে দেন।

১৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তদন্তের অংশ হিসেবে পুলিশ সুপার গঙ্গাচড়া মডেল থানায় গেলে এসআই উত্তম কুমারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—তা জানতে হোয়াটসঅ্যাপে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেন বাদশাহ ওসমানী। পুলিশ সুপার ফোন রিসিভ না করায় তিনি একটি বার্তা পাঠান। ওই বার্তার পর পুলিশ সুপার ফোন করে তাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং পুলিশের বিরুদ্ধে আর কোনো সংবাদ প্রকাশ করলে ‘দেখে নেওয়া হবে’ বলে হুমকি দেন বলে অভিযোগ করা হয়। এমনকি তিনি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত মামলার প্রসঙ্গ টেনে ভয়ভীতি দেখান বলেও দাবি করা হয়।

এই ঘটনার পর নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন বলে জানান বাদশাহ ওসমানী। বিষয়টি তিনি রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলামসহ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে অবহিত করেছেন।

রংপুর সম্মিলিত সাংবাদিক সমাজের আহ্বায়ক সিনিয়র সাংবাদিক আব্দুস শাহেদ মন্টু বলেন, একজন সাংবাদিক কেমন—তা নির্ধারণ করা কোনো পুলিশ সুপারের কাজ নয়। সাংবাদিককে হুমকি দেওয়া কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। প্রয়োজনে রাস্তায় নামার কথাও বলেন তিনি।

রংপুর বিভাগীয় প্রধান লিয়াকত আলী বাদল অভিযোগ করেন, পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সঙ্গে বারবার খারাপ আচরণ করেছেন। তিনি বলেন, তারাগঞ্জে মুক্তিযোদ্ধা দম্পতি হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার রাগান্বিত হয়ে ফোন কেটে দেন। এমন আচরণে সামনে নির্বাচনকালে সাংবাদিকরা সঠিক তথ্য থেকে বঞ্চিত হবেন বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি এবং পুলিশ সুপারের বদলি দাবি করেন।

রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাবের সহসভাপতি মাহমুদুল হাসান জানান, পুলিশের ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে তথ্য নিতে গেলে পুলিশ সুপার সাংবাদিকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। ১৬ ডিসেম্বর বিভাগীয় কমিশনারের সাক্ষাৎকারের সময়ও পুলিশ সুপারের মন্তব্যে সাংবাদিকরা হতভম্ব হয়ে পড়েন বলে জানান তিনি।

সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সরকার মাজহারুল মান্নান বলেন, বাদশাহ ওসমানী একজন পরীক্ষিত ও নির্যাতিত সাংবাদিক। অতীতেও এক পুলিশ সুপার তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমান পুলিশ সুপারের হুমকি সেই পথেই হাঁটার ইঙ্গিত দেয়। এ ধরনের হুমকি মেনে নেওয়া হবে না বলে তিনি কঠোর ভাষায় জানান।

সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সালেকুজ্জামান সালেক বলেন, সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বরদাস্ত করা হবে না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা না নিলে পরবর্তী কর্মসূচি নেওয়া হবে।

এদিকে দিনাজপুরে কর্মরত সাংবাদিকরাও জানান, পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইন দিনাজপুরে থাকাকালীন সাংবাদিকদের সঙ্গে ভালো আচরণ করতেন না। সাক্ষাৎকার দিতেও অনীহা দেখাতেন, ফলে সাংবাদিকরা তাকে এড়িয়ে চলতেন।

এই বিষয়ে রংপুর জেলা পুলিশ সুপার মারুফত হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি এবং হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তারও কোনো জবাব দেননি।

রংপুর রেঞ্জ ডিআইজি আমিনুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তার নজরে এনেছেন। পুলিশ সুপার বর্তমানে রাজশাহীতে নির্বাচনি প্রশিক্ষণে রয়েছেন। তিনি ফিরে এলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান ডিআইজি।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement