হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় কোন শারীরিক সমস্যা

হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় কোন শারীরিক সমস্যা ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৭:৩৬, ২৪ অক্টোবর ২০২৫

হৃদরোগ এখনো পৃথিবীজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। তবে সুখবর হলো—সঠিক জীবনযাপন ও সচেতনতা বজায় রাখলে এটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সাধারণত করোনারি হৃদরোগ তখনই হয়, যখন হৃদপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনীগুলো সংকুচিত বা বন্ধ হয়ে পড়ে। ধমনীর ভেতরে চর্বি বা প্লাক জমে যে বাধা তৈরি হয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেটিই ‘এথেরোস্ক্লেরোসিস’।

এই বাধা রক্তপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, যার ফলে বুকে ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক এমনকি হার্ট ফেইলিওরের মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

উচ্চ রক্তচাপ

রক্তচাপ বেড়ে গেলে তা হৃদপিণ্ডের ওপর বাড়তি চাপ ফেলে এবং ধমনীর দেয়াল দুর্বল করে দেয়। এতে চর্বি জমে ব্লকেজ হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া, সুষম খাদ্যগ্রহণ, লবণ কম খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়ামের মাধ্যমে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। PubMed Central-এ প্রকাশিত গবেষণা অনুযায়ী, দীর্ঘদিন অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃদরোগের বড় কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

উচ্চ কোলেস্টেরল

অতিরিক্ত LDL বা ‘খারাপ’ কোলেস্টেরল ধমনীর ভেতরে জমে প্লাক তৈরি করে, যা রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে। তাই খাদ্যাভ্যাসে বেশি করে ফল, শাকসবজি ও পূর্ণ শস্য রাখলে শরীরের ক্ষতিকর চর্বি কমে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, রক্তে মোট কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে করোনারি হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়ে।

ডায়াবেটিস

রক্তে অতিরিক্ত গ্লুকোজ বা শর্করা রক্তনালী ও স্নায়ুকে ক্ষতি করে, যার ফলে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। খাদ্যাভ্যাসে নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন এবং প্রয়োজনে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা গেলে হৃদরোগের আশঙ্কা অনেক কমে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে করোনারি আর্টারি ডিজিজ (CAD) দীর্ঘমেয়াদি জটিলতার প্রধান কারণগুলোর একটি।

ধূমপান

ধূমপান সরাসরি হৃদপিণ্ডের ক্ষতি করে। এটি ধমনীর অভ্যন্তরীণ প্রাচীর ক্ষতিগ্রস্ত করে ও শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দেয়, ফলে হৃদপিণ্ডকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ-এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ধূমপান করোনারি ধমনী রোগের অন্যতম প্রধান ঝুঁকির উপাদান।

স্থূলতা

অতিরিক্ত ওজন, বিশেষ করে পেটের চারপাশে জমে থাকা মেদ, হৃদরোগের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। এটি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস ও কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। নিয়মিত ব্যায়াম ও সুষম খাদ্যাভ্যাস ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে, যা হৃদপিণ্ডের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা

অলস জীবনধারা বা শারীরিক পরিশ্রমের অভাবও হৃদরোগের আরেকটি নীরব কারণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে রক্তপ্রবাহ স্বাভাবিক থাকে এবং হৃদপিণ্ড আরও শক্তিশালী হয়।

সবশেষে বলা যায়, সুস্থ হৃদয়ের জন্য প্রয়োজন—নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ, পরিমিত ও স্বাস্থ্যকর খাবার, ধূমপান ত্যাগ এবং রক্তচাপ ও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ। এগুলোই হতে পারে দীর্ঘ ও স্বাস্থ্যকর জীবনের মূলমন্ত্র।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement