হঠাৎ কোনো দুর্ঘটনা, স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক কিংবা জীবনঘাতী অসুস্থতা দেখা দিলে কয়েকটি মিনিটই রোগীর ভাগ্য নির্ধারণ করে দিতে পারে।
এসব সংকটময় মুহূর্তে দ্রুত চিকিৎসা পাওয়া বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়—বিশেষ করে রোগী যদি দূরের এলাকায় থাকেন বা উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে দ্রুত স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়।
সড়ক পথে সময় নষ্ট হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারে। এই কারণেই দেশ-বিদেশে দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স সেবা, যা আকাশপথে অতি স্বল্প সময়ে রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে সক্ষম।
এই বিশেষ উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারগুলোতে থাকে ভেন্টিলেটর, ডিফিব্রিলেটর, রোগী মনিটরিং সিস্টেম, জরুরি ওষুধপত্রসহ পূর্ণ আইসিইউ সুবিধা। সঙ্গে থাকেন অভিজ্ঞ চিকিৎসক ও দক্ষ প্যারামেডিকরা, যারা যাত্রাপথে রোগীর প্রতিটি শারীরিক পরিবর্তন নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন।
দুটি প্রধান ধরণের এয়ার অ্যাম্বুলেন্স
১. ফিক্সড-উইং ফ্লাইট অ্যাম্বুলেন্স
জেট বা টার্বোপ্রপ বিমান ব্যবহৃত হয় দীর্ঘ দূরত্ব বা আন্তর্জাতিক রোগী পরিবহনে। বেশি জায়গা থাকায় উন্নতমানের আইসিইউ সুবিধা সংযোজন করা যায়। স্থিতিশীল বিমানযাত্রা থাকায় দূরপাল্লার রোগী পরিবহনে এটি বিশেষভাবে উপযোগী।
২. রোটারি-ফ্লাইট বা হেলিকপ্টার অ্যাম্বুলেন্স
স্বল্প দূরত্ব, দুর্গম অঞ্চল বা জরুরি উদ্ধার অভিযানে হেলিকপ্টার সবচেয়ে কার্যকর। রানওয়ে ছাড়াই হাসপাতালের ছাদ, মাঠ বা নির্ধারিত খোলা জায়গায় সরাসরি অবতরণ করতে পারে। দ্রুত ‘বেড-টু-বেড’ সেবা দিতে পারার কারণে দেশের অভ্যন্তরে এটি অত্যন্ত জনপ্রিয়।
বাংলাদেশে সেবার খরচ
এয়ার অ্যাম্বুলেন্স একটি বিশেষায়িত ও ব্যয়বহুল সেবা। দেশে হেলিকপ্টারভিত্তিক এয়ার অ্যাম্বুলেন্সের ভাড়া সাধারণত ৯০ হাজার টাকা থেকে শুরু হয় এবং দূরত্ব অনুসারে সাড়ে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত যেতে পারে।
আন্তর্জাতিক পরিবহনের ক্ষেত্রে খরচ আরও বেশি হয়। দূরত্ব, উড়োজাহাজের ধরন, মেডিকেল সেটআপ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সহায়তা অনুযায়ী ব্যয় কয়েক লাখ টাকার বেশি হয়ে থাকে।
খরচ বাড়ার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
রোগী পরিবহনের দূরত্ব
হেলিকপ্টার বা ফিক্সড-উইং বিমানের ধরণ
অতিরিক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন (ভেন্টিলেটর, ECMO, কার্ডিয়াক সাপোর্ট)
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও মেডিকেল দলের উপস্থিতি
বিমানবন্দর ল্যান্ডিং চার্জ ও লজিস্টিক ব্যয়
কেন জরুরি অবস্থায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্স গুরুত্বপূর্ণ?
দ্রুত সময়ে রোগীকে উন্নত চিকিৎসাকেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া, দুর্গম এলাকা থেকে তাৎক্ষণিক উদ্ধার, যাত্রার পুরোটা সময় আইসিইউ সুবিধা বজায় রাখা এবং জীবন ঝুঁকি কমানোর জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স অনেক ক্ষেত্রেই অমূল্য হয়ে ওঠে। সংকটকালীন সময়ে এটি রোগীর জীবন রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।


































