যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় আতঙ্ক ছড়িয়ে মৃত্যুফাঁদ

যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও গাজায় আতঙ্ক ছড়িয়ে মৃত্যুফাঁদ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৪:১৮, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

দীর্ঘ দুই বছরের ইসরায়েলি আগ্রাসনের পর অবশেষে গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছে। যদিও কিছু বিচ্ছিন্ন হামলার খবর পাওয়া গেছে, তবে ইসরায়েলি আক্রমণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

ধ্বংসস্তূপে ঢেকে থাকা এই ভূখণ্ডে ফিলিস্তিনিরা পুনর্গঠনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে, কিন্তু তাদের সেই স্বপ্নে বড় প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়ে গেছে। ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজার পুনর্গঠন কাজ স্থবির, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে আছে হাজার হাজার মানুষ, আর চারপাশে ছড়িয়ে আছে হাজার হাজার টন অবিস্ফোরিত বোমা। এসব অবিস্ফোরিত বোমা এখন ফিলিস্তিনির জন্য মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে।

দখলদারদের হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া মানুষের জীবনকে আরও বিপন্ন করেছে তীব্র খাদ্য সংকট। যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও সীমান্ত পাহারা দেওয়া ইসরায়েলি সেনাদের কারণে মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না। সোমবার (২৭ অক্টোবর) আল জাজিরা এই পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে ভারী যন্ত্রপাতি গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। ফলে ধ্বংসস্তূপ সরানো ও অবকাঠামো পুনর্গঠনের কাজ প্রায় অচল হয়ে গেছে। গাজা সিটির মেয়র ইয়াহিয়া আল-সররাজ জানিয়েছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া মানুষদের উদ্ধার করা এবং শহরের অবকাঠামো পুনর্গঠন করতে কমপক্ষে ২৫০টি ভারী যন্ত্রপাতি ও এক হাজার টন সিমেন্ট প্রয়োজন।

তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ছয়টি ট্রাক সীমান্ত পার হয়ে গাজায় পৌঁছেছে। এ অবস্থায় প্রায় ৯ হাজার ফিলিস্তিনি এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন। নতুন যন্ত্রপাতিগুলো ব্যবহার করা হচ্ছে ইসরায়েলি বন্দিদের মরদেহ উদ্ধারে, ফিলিস্তিনিদের উদ্ধার কাজে নয়। আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিরা জানে যতক্ষণ পর্যন্ত সব ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত দেওয়া হবে না, ততক্ষণ যুদ্ধবিরতিতে প্রকৃত অগ্রগতি সম্ভব হবে না।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একই দিনে ঘোষণা করেন, গাজায় কোন বিদেশি বাহিনী কাজ করতে পারবে, তা নির্ধারণের ক্ষমতা শুধু ইসরায়েলেরই আছে। তিনি বলেন, “আমরা আমাদের নিরাপত্তা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণ করি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে আমরা জানিয়েছি, কোন বাহিনী গাজায় গ্রহণযোগ্য, তা আমরা নির্ধারণ করব।” নেতানিয়াহু দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্রও তাদের অবস্থান মেনে নিয়েছে।

গাজার পুনর্গঠন কাজের সবচেয়ে বড় বাধা বিস্ফোরিত না হওয়া বোমা। যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা হালো ট্রাস্টের মধ্যপ্রাচ্য পরিচালক নিকোলাস টরবেট বলেন, গাজা নগরীর প্রায় প্রতিটি অংশে বোমা পড়েছে, যার মধ্যে অনেক বিস্ফোরিত হয়নি। এসব বোমা অপসারণে প্রচুর সময় লাগে, ফলে পুনর্গঠন বিলম্বিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “সবচেয়ে নিরাপদ উপায় হলো ছোট পরিমাণ বিস্ফোরক ব্যবহার করে বোমাগুলোকে উড়িয়ে দেওয়া। এর জন্য জটিল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন নেই; ছোট যান বা হাতে নিয়েও সরঞ্জাম বহন করা সম্ভব।”

ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, গাজায় অন্তত ২ লাখ টন বোমা ফেলেছে ইসরায়েল, যার মধ্যে প্রায় ৭০ হাজার টন এখনও বিস্ফোরিত হয়নি। এই পরিস্থিতি ধ্বংসস্তূপের নিচে থাকা মানুষের জীবন ও পুনর্গঠন প্রচেষ্টা উভয়কেই মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement