চিরতরে বাতিল হচ্ছে ছয় ধরনের জমির দলিল
Published : ১৫:৫১, ২৭ অক্টোবর ২০২৫
ভূমি ব্যবস্থাপনাকে আরও স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও জালিয়াতিমুক্ত করতে বড় পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার।
উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ছয় ধরনের দলিলকে সম্পূর্ণভাবে বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, যা দেশের ভূমি ব্যবস্থাপনায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আসন্ন জুন মাসের মধ্যেই এই ছয় শ্রেণির দলিল বাতিলের কাজ সম্পন্ন হবে, এবং জুলাই মাস থেকে সারাদেশে ডিজিটাল ভূমি জরিপ (বিডিএস) কার্যক্রম আরও জোরদারভাবে পরিচালনা করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে ভবিষ্যতে জমি নিয়ে জালিয়াতি, প্রতারণা ও আইনি জটিলতা কমে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকার যে দলিলগুলো বাতিল করতে যাচ্ছে, সেগুলো মূলত এমন দলিল—যেগুলো অনিয়ম, জালিয়াতি বা আইনি সীমা অতিক্রম করে তৈরি হয়েছে। চলমান দলিল স্ক্যানিং ও অনলাইন নিবন্ধন প্রক্রিয়ায় এসব দলিল আর ডিজিটাল ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
১. প্রতারণামূলক হেবা দলিল:
যে সব হেবা দলিল তৈরি হয়েছে প্রতারণা, জালিয়াতি বা অসুস্থ ব্যক্তিকে ব্যবহার করে, কিংবা নির্ধারিত আইনগত পদ্ধতি অনুসরণ না করে সম্পত্তি হস্তান্তর করা হয়েছে—এসব দলিল বাতিল করা হবে।
২. সীমালঙ্ঘনকারী ওসিয়তনামা:
ইসলামী বিধান অনুযায়ী, সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশের বেশি ওসিয়ত করা যায় না। কেউ যদি এই সীমা লঙ্ঘন করে ওসিয়তনামা তৈরি করে থাকেন, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো ওয়ারিশকে বঞ্চিত করে দলিল তৈরি করেন, তা বাতিল বলে গণ্য হবে। তবে আগের ওসিয়ত বাতিল করে নতুনভাবে করা ওসিয়ত বৈধ থাকবে।
৩. রেজিস্ট্রেশনবিহীন দলিল:
মহুরীর মাধ্যমে তৈরি কিন্তু আইনগতভাবে নিবন্ধন করা হয়নি—এমন সব দলিলও বৈধ হিসেবে গণ্য হবে না। এগুলো ডিজিটাল রূপান্তর প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে না।
৪. জাল বা ভুয়া দলিল:
প্রতারণা বা মিথ্যা তথ্যের মাধ্যমে প্রস্তুত করা দলিল প্রশাসনের হাতে এলে তা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল করা হবে। মন্ত্রণালয় মনে করছে, এই ধরনের জাল দলিল অনলাইনে অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলে ভবিষ্যতে তা বাতিল করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে।
৫. ক্ষমতার অপব্যবহারে অর্জিত দলিল:
রাজনৈতিক প্রভাব বা জোরজবরদস্তি করে জমি দখল করে তৈরি করা দলিলগুলোকেও অবৈধ ঘোষণা করা হবে। ভুক্তভোগীরা প্রয়োজন হলে আদালতের মাধ্যমে তাদের বৈধ মালিকানা ফিরে পাবেন।
৬. অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রির দলিল:
যে কোনো ওয়ারিশ তার প্রকৃত প্রাপ্য অংশের চেয়ে বেশি জমি বিক্রি করলে, অতিরিক্ত অংশের দলিল বাতিল হিসেবে গণ্য হবে। প্রকৃত ওয়ারিশরা আদালতের মাধ্যমে তাদের জমি পুনরুদ্ধার করতে পারবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো জমির মালিকানায় স্বচ্ছতা, নিরাপত্তা ও ন্যায্যতা নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে, দীর্ঘদিন ধরে জালিয়াতির শিকার হয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের তাদের বৈধ অধিকার ফিরিয়ে দেওয়াই এই নতুন ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সংস্কারের অন্যতম উদ্দেশ্য।
বিডি/এএন


































