সকালের নাশতায় এই ৭টি অভ্যাসে বেড়ে যায় ইনসুলিন

সকালের নাশতায় এই ৭টি অভ্যাসে বেড়ে যায় ইনসুলিন

The Business Daily Desk

Published : ০০:০১, ৭ আগস্ট ২০২৫

ইনসুলিন শরীরের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হরমোন, যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। কিন্তু অনেকেই জানেন না যে, প্রতিদিন সকালে আমরা যেভাবে নাশতা করি, সেই অভ্যাসগুলো ইনসুলিন হরমোনের স্বাভাবিক ভারসাম্যে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সকালে নাশতার সময় কিছু ভুল অভ্যাস আমাদের শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা ডায়াবেটিস, ওজন বৃদ্ধি, হৃদ্‌রোগ এমনকি ক্যানসারের ঝুঁকিও বাড়াতে পারে। ইনসুলিন কী এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ: ইনসুলিন একটি হরমোন, যা অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয়ে শরীরের কোষগুলোকে রক্তে থাকা গ্লুকোজ শোষণের নির্দেশ দেয়।

 

এই প্রক্রিয়াটি শরীরের শক্তি উৎপাদনে সহায়তা করে। ইনসুলিনের ভারসাম্যহীনতা যেমন ইনসুলিন স্বল্পতা ডায়াবেটিস সৃষ্টি করে, তেমনি অতিরিক্ত ইনসুলিনও শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এটি হাইপোগ্লাইসেমিয়া (রক্তে শর্করার মাত্রা হঠাৎ কমে যাওয়া), ওজন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ ও নানা দীর্ঘমেয়াদি অসুখের সম্ভাবনা বাড়ায়। সকালের নাশতায় যেসব ভুল বাড়িয়ে দেয় ইনসুলিন: বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের দৈনন্দিন সকালের কয়েকটি সাধারণ অভ্যাস ইনসুলিনের মাত্রা অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দিতে পারে। নিচে এমন সাতটি অভ্যাস তুলে ধরা হলো— ১. জুস বা মিষ্টি পানীয় দিয়ে নাশতা শুরু করা অনেকে সকালে ফলের জুস দিয়ে দিন শুরু করেন, যা স্বাস্থ্যকর মনে হলেও এতে আঁশ না থাকায় শর্করা দ্রুত রক্তে মিশে যায়। এমনকি প্রাকৃতিক চিনিও ইনসুলিন দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। বিশেষ করে যদি চিনি মেশানো জুস হয়, তবে তা আরও ক্ষতিকর। ভালো বিকল্প হলো গোটা ফল খাওয়া এবং চিনি ছাড়া পানীয় গ্রহণ করা।

 ২. উচ্চমাত্রার কার্বোহাইড্রেট খাওয়া সাদা পাউরুটি, সিরিয়াল, জ্যাম, জেলি, কেক, পেস্ট্রি বা চকলেটজাতীয় খাবারে প্রচুর পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট থাকলেও, এগুলোতে প্রোটিন ও আঁশ থাকে খুব কম। ফলে শরীর দ্রুত এগুলো হজম করে এবং ইনসুলিন দ্রুত নিঃসৃত হয়। এজন্য সকালের নাশতায় পুরো শস্য, ডিম, বাদাম, সবজি ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। ৩. অতিরিক্ত মিষ্টি স্মুদি বা আঁশবিহীন খাবার খাওয়া বাজারজাত স্মুদিগুলোর বেশিরভাগে উচ্চমাত্রার চিনি থাকে। এমনকি ঘরে বানানো স্মুদিতেও অনেক সময় ফলের সঙ্গে দই বা দুধের মাধ্যমে চিনি যোগ হয়। এতে ইনসুলিন হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে। স্মুদিতে প্রোটিন ও আঁশ যোগ করতে চাইলে বাদাম, টক দই, ওটস ইত্যাদি ব্যবহার করা ভালো। ৪. প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির অভাব প্রাতঃরাশে শুধু কার্বোহাইড্রেটনির্ভর খাবার খেলে শরীরে গ্লুকোজ দ্রুত প্রবেশ করে। তবে যদি সেই খাবারের সঙ্গে প্রোটিন বা স্বাস্থ্যকর চর্বি যেমন ডিম, বাদাম, বীজ, ঘি ইত্যাদি যোগ করা হয়, তাহলে গ্লুকোজ শোষণের গতি কমে যায় এবং ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। ৫. সকালের নাশতা না করা বা দেরিতে খাওয়া অনেকেই সকালে সময়ের অভাবে নাশতা এড়িয়ে যান বা অনেক দেরিতে খান। এতে রক্তে শর্করার ওঠানামা বেড়ে যায়, ফলে শরীর পরে অতিরিক্ত ইনসুলিন নিঃসরণ করে ক্ষুধা মেটাতে। তাই নির্দিষ্ট সময়ে হালকা ও সুষম নাশতা গ্রহণ করা প্রয়োজন। ৬. অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়া প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ইনস্ট্যান্ট নুডলস, প্যাকেটজাত কেক, বিস্কুট, বার ইত্যাদি উচ্চ চিনি ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ।

এগুলো হজম হয় দ্রুত এবং শরীরে ইনসুলিন হঠাৎ করে বেড়ে যায়। প্রাকৃতিক, ঘরে তৈরি খাবার গ্রহণ করাই ভালো। ৭. নাশতার সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি না পান করা শরীরকে সক্রিয় রাখতে সকালের নাশতার সঙ্গে পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ জরুরি। ডিহাইড্রেশন রক্তে গ্লুকোজ ঘনত্ব বাড়িয়ে দিতে পারে, যার ফলে ইনসুলিনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে। তাই সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। ইনসুলিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দিনের শুরুতেই কিছু সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। প্রাকৃতিক ও আঁশসমৃদ্ধ খাবার, প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির সঠিক সংমিশ্রণ, এবং চিনি ও পরিশোধিত খাবার এড়িয়ে চলাই ইনসুলিন নিয়ন্ত্রণের কার্যকর উপায়। নিয়মিত শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুমের সঙ্গে এসব খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে ইনসুলিন ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement