টমেটো যাদের জন্য ক্ষতিকর

টমেটো যাদের জন্য ক্ষতিকর ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০৩:১৬, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫

শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত হলেও টমেটো বর্তমানে সারা বছরই সহজলভ্য। এতে ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্টসহ নানা ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকলেও অতিরিক্ত পরিমাণে টমেটো খেলে উপকারের বদলে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি দেখা দেয়।

শুধু তাই নয়, কিছু শারীরিক অবস্থার ক্ষেত্রে টমেটো সীমিত রাখা বা পুরোপুরি এড়িয়ে চলার পরামর্শও দিয়ে থাকেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ বেশি টমেটো খেলে অন্ত্রের স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে এবং এসিডিটি, বুকজ্বালা কিংবা পেট ফোলার মতো সমস্যা তৈরি হতে পারে। টমেটো কেন পরিমিত খাওয়া জরুরি এবং কোন কোন মানুষদের ক্ষেত্রে এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে—তা জানাতেই আজকের আলোচনা।

টমেটো স্বভাবগতভাবেই এসিডিক একটি খাবার। এতে ম্যালিক এসিড ও সিট্রিক এসিডের উপস্থিতি রয়েছে। অতিরিক্ত টমেটো খেলে পাকস্থলীতে এসিডের মাত্রা বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে বুকজ্বালা, গ্যাস, অস্বস্তি এবং এসিড রিফ্লাক্সের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। যাদের আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক বা অ্যাসিডিটির প্রবণতা আছে, তাদের জন্য এটি আরও বেশি সমস্যার কারণ হতে পারে।

কিডনিতে পাথরের রোগীদের ক্ষেত্রে টমেটো খাওয়ার বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন। টমেটোতে তুলনামূলকভাবে ক্যালসিয়াম ও অক্সালেটের পরিমাণ বেশি থাকে। এসব উপাদান কিডনিতে পাথর তৈরির ঝুঁকি বাড়াতে পারে। বিশেষ করে টমেটোর বীজ পাথরের আকার বড় করতে সহায়তা করতে পারে বলে ধারণা করা হয়। তাই যাদের কিডনিতে পাথরের সমস্যা রয়েছে, তাদের টমেটো কম খাওয়া উচিত অথবা বীজ ছাড়িয়ে খাওয়াই নিরাপদ।

জয়েন্টের ব্যথা বা প্রদাহজনিত সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্যও টমেটো সমস্যার কারণ হতে পারে। টমেটোতে ‘সোলানিন’ নামের একটি অ্যালকালয়েড থাকে, যা শরীরে প্রদাহ বাড়াতে পারে বলে মনে করা হয়। এর ফলে যাদের জয়েন্টে ব্যথা, ফোলা বা আর্থ্রাইটিসের মতো সমস্যা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে টমেটো খেলে ব্যথা আরও বেড়ে যেতে পারে।

কিছু মানুষের ক্ষেত্রে টমেটো অ্যালার্জির কারণও হতে পারে। টমেটো খাওয়ার পর ত্বকে র‍্যাশ, চুলকানি, লালচে ভাব বা ফোলাভাব দেখা দিলে তা অ্যালার্জির লক্ষণ হতে পারে। আগে কখনো টমেটো খেয়ে এ ধরনের প্রতিক্রিয়া হয়ে থাকলে ভবিষ্যতে এর সেবন ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

পেট ও হজমের ওপরও টমেটোর প্রভাব পড়তে পারে। অতিরিক্ত টমেটো খাওয়া অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং পেট ফোলা, অস্বস্তি কিংবা ডায়রিয়ার মতো সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। টমেটোতে থাকা লেকটিন হজমতন্ত্রে প্রদাহ ঘটাতে পারে, যা গাট হেলথের জন্য ভালো নয়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, টমেটো আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং এতে থাকা ভিটামিন ও অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট শরীরের জন্য উপকারী। তবে যেকোনো ভালো খাবারের মতোই টমেটোর ক্ষেত্রেও পরিমিতি বজায় রাখা জরুরি। অতিরিক্ত টমেটো খেলে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হতে পারে এবং ধীরে ধীরে নানা শারীরিক অস্বস্তি দেখা দিতে পারে, যা অনেক সময় আমরা খাবারের সঙ্গে মিলিয়ে বুঝতে পারি না।

বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই গ্যাস্ট্রিক, কিডনির সমস্যা, জয়েন্টের ব্যথা বা অ্যালার্জির মতো শারীরিক জটিলতা রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে টমেটোর প্রভাব আরও স্পষ্ট হতে পারে। তাই নিজের শরীরের সংকেতগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া, খাদ্যাভ্যাসে সচেতন থাকা, প্রতিদিনের ডায়েটে বৈচিত্র্য রাখা এবং সব খাবার পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করাই সুস্থ থাকার সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর উপায়।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement