গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে ভূমিকম্পের কার্যত লড়াই চলছে। বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে ঢাকাসহ আশপাশের অঞ্চল আবার কেঁপে ওঠে, রিখটার স্কেলে মাত্রা ছিল ৪.১।
এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার পাটুয়ারপাড় এলাকা, যা ঢাকার কেন্দ্র থেকে প্রায় ৩৮ কিলোমিটার দূরে। এই কম্পনে ঢাকার নাগরিকরা এবং আশেপাশের মানুষ আতঙ্কিত হন।
অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে এটি বাংলাদেশের মধ্যে বহুবার অনুভূত হওয়া ভূমিকম্পের মধ্যে একটি। চলতি ১৪ দিনে চারটি ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ঢাকার আশেপাশের নরসিংদী ও গাজীপুর অঞ্চলে ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী কম্পনটি ঘটেছিল ২১ নভেম্বর, যার মাত্রা ছিল ৫.৭।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের পাঁচটি ভূমিকম্পই বাংলাদেশে উৎপত্তি হয়েছে। প্রথমটি হয়েছিল ২১ সেপ্টেম্বর, সিলেটের ছাতকে, মাত্রা ৪.২। এরপর ২১ নভেম্বরের ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পর ২২ নভেম্বর নরসিংদী জেলার কালীগঞ্জে ৪.২ মাত্রার কম্পন এবং ২৭ নভেম্বর গাজীপুরের ঢালাদিয়ায় ৪ মাত্রার কম্পন ঘটেছে।
এমন ভূমিকম্প কেবল বাংলাদেশেই সীমাবদ্ধ নয়; মিয়ানমার, ভারত, নেপাল এবং চীনের তিব্বত সীমান্তেও ঘন ঘন কম্পন হচ্ছে। চলতি বছর এই অঞ্চলে ২৮৫ বার ভূমিকম্প রেকর্ড হয়েছে, যার কোনোটি ৪ মাত্রার নিচে ছিল না।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বাংলাদেশের অবস্থান টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে। পশ্চিমে ভারতীয় প্লেট, পূর্বে বার্মা প্লেট এবং উত্তরে ইউরেশিয়ান প্লেট অবস্থান করছে। সাবেক অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার ব্যাখ্যা করেছেন, ভারতীয় প্লেটটি ধীরে ধীরে বার্মা প্লেটের নিচে তলিয়ে যাচ্ছে, যা চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে সাবডাকশন জোন তৈরি করেছে।
এই জোনের বিস্তৃতি সিলেট থেকে টেকনাফ পর্যন্ত, এবং এখানে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার শক্তি জমা রয়েছে। সাম্প্রতিক ক্ষুদ্র ভূমিকম্প এই শক্তির আংশিক মুক্তি ঘটিয়েছে, যা ইঙ্গিত দেয় যে ভবিষ্যতে বড় ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে।
তবে ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই বলছেন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মমিনুল ইসলাম উল্লেখ করেছেন, ২১ নভেম্বরের কম্পনের পর যে ভূমিকম্পগুলো ঘটছে, তা আফটার শক।
জাপানের ২০১১ সালের ৯ মাত্রার টোহুকু ভূমিকম্পের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, ছোট আফটার শক দীর্ঘ সময় ধরে চলতে পারে। বাংলাদেশেও ২১ নভেম্বরের পর আফটার শক চলতে থাকবে, সম্ভবত আরও তিন মাস পর্যন্ত। ২ মাত্রার নিচের কম্পনগুলো আমাদের সিস্টেমে ধরা পড়ে না, তাই মানুষের আতঙ্কের প্রয়োজন নেই।
সারসংক্ষেপে বলা যায়, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক ভূমিকম্পগুলো প্রাকৃতিক আফটার শকের অংশ, কিন্তু বড় কম্পনের সম্ভাবনার জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং নাগরিকদের সতর্ক থাকা গুরুত্বপূর্ণ।

































