একের পর এক কনসার্ট বাতিল,কারন যা ছিল
Published : ১১:৫২, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
ক্ষমতার পরিবর্তনের পর গত শীত মৌসুমে ঢাকায় একাধিক কনসার্ট অনুষ্ঠিত হলেও এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আয়োজকদের দাবি, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে কারণ দেখিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কনসার্টের অনুমতি দিচ্ছে না। এর ফলে বড় আকারের অনুষ্ঠানগুলো একের পর এক স্থগিত হয়ে যাচ্ছে।
বিদেশি শিল্পীদের আনা, আয়োজনের প্রস্তুতি, ভেন্যু বুকিং—সবকিছু ঠিকঠাক থাকার পরও অনুমতি না মেলায় আয়োজকদের যেমন ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে, তেমনি টিকেট কিনে অপেক্ষায় থাকা দর্শকরাও পড়ছেন চরম ভোগান্তিতে।
এ অবস্থায় নতুন এক প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যারা সাধারণ কনসার্টের অনুমতি পাচ্ছেন না, তাদের মধ্যে কিছু শিল্পীকে দিয়ে আয়োজন করা হচ্ছে ব্যক্তিগত বা প্রাইভেট কনসার্ট। প্রভাবশালী ব্যক্তি বা ক্লাবগুলো এসব অনুষ্ঠান আয়োজনে সক্ষম হওয়ায়, সাধারণ দর্শকের প্রশ্ন—তাহলে কি বড় অঙ্কের অর্থ খরচ করতে পারলেই কনসার্ট উপভোগ করা সম্ভব?
এই বিষয়ে স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গনি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা অনুবিভাগের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আপাতত কোনো কনসার্টের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। গত দেড় মাসে আসা ৫–৬টি আবেদন ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার আগেও মাত্র ১০–১২টি আবেদন অনুমোদন পেয়েছিল। তিনি জানান, অনুমতি বাতিলের বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে আবেদনও কমে গেছে।
বাংলাদেশে সাধারণত শীতকালেই বেশি কনসার্ট হয়। গত মৌসুমের শেষে দু-একটি আয়োজন বাধার মুখে পড়লেও এ বছর আরও বড় ধরনের সংকটে পড়ছেন আয়োজকরা। সম্প্রতি আলোচনায় আসে পাকিস্তানি ব্যান্ড কাভিশ-এর ‘ওয়েভ ফেস্ট: ফিল দ্য উইন্টার’ কনসার্ট স্থগিত হওয়ার বিষয়টি। শিল্পীরা ঢাকায় পৌঁছে গেলেও শেষ মুহূর্তে অনুমতি না মেলায় তারা মঞ্চে উঠতে পারেননি। আয়োজক প্রতিষ্ঠান প্রাইম ওয়েভ কমিউনিকেশনসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ইনফতার দানিয়াল জানান, তাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ ছিল। শিল্পীর বেতন, ভেন্যু, সাউন্ড-লাইটসহ প্রয়োজনীয় সব খরচ আগেই পরিশোধ করা হয়েছিল। তবুও অনুমতি না পাওয়ার কারণ তারা জানেন না।
দানিয়াল বলেন, বিদেশি শিল্পী আনতে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া অত্যন্ত জটিল। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ একাধিক সংস্থার অনুমোদন লাগে, যার সবই শেষ মুহূর্তে দেওয়া হয়। তাই বাধ্য হয়ে আগেই টিকেট বিক্রি করতে হয়। কিন্তু অনুমতি না মেললে টিকেটধারীরাও সমস্যায় পড়েন।
তিনি প্রশ্ন তোলেন, দেশে ক্রিকেট, ফুটবল, ওয়াজ-মাহফিল, বড় জনসমাবেশ সবই হচ্ছে—তাহলে কনসার্ট কেন থমকে আছে? কনসার্টকেই কি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে?
স্থগিত হওয়া কনসার্টের টিকেট ফেরত নিয়েও ক্ষোভ বাড়ছে দর্শকদের মধ্যে। আলী আজমত, জাল, অনুভ জৈনসহ বিভিন্ন শিল্পীর কনসার্ট বাতিল হলেও অনেক দর্শক এখনও রিফান্ড পাননি। অনেকে মেইল ও ফোনে যোগাযোগ করেও কোনো উত্তর পাননি বলে অভিযোগ করেছেন।
আয়োজকদের বক্তব্য অনুযায়ী, একটি কনসার্ট বাতিল হলে তারা কেবল আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বরং বিদেশি শিল্পীদের কাছে দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হয়। পরিকল্পনা, টিকেট বিক্রি এবং প্রচারের পর হঠাৎ বাতিল হওয়ায় দেশের বিনোদন শিল্প যে সংকটের মুখে পড়ছে, তা-ও তারা উল্লেখ করেছেন।
তবে অন্যদিকে প্রকাশ পাচ্ছে আরেকটি বাস্তবতা—স্থগিত হওয়া কনসার্টের শিল্পীরা ব্যক্তিগত ক্লাব বা বড় আয়োজকদের আমন্ত্রণে প্রাইভেট কনসার্ট করছেন। মেইন স্টেজের সত্বাধিকারী নিশা সালাম জানান, আলী আজমতের কনসার্ট যেদিন সাধারণ দর্শকদের জন্য বাতিল হয়, তার আগের দিনই তিনি বসুন্ধরায় একটি ব্যক্তিগত কনসার্টে গান করেন। জাল ব্যান্ডও এমন আয়োজন করেছে, এমনকি পাকিস্তানি গায়ক ফারহান সাঈদ চট্টগ্রামের এক বিয়ের অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন।
তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, তাহলে কি বিনোদনের ক্ষেত্রটি কেবল ধনী ও প্রভাবশালীদের জন্যই উন্মুক্ত হচ্ছে?
একাধিক শিল্পী নাম প্রকাশ না করে বলেছেন, যদি নিরাপত্তার কারণে কনসার্ট স্থগিত করা হয়, তাহলে অন্যান্য বড় জনসমাবেশ কেন সীমাবদ্ধ নয়? কনসার্টকেই কেন স্বাধীনভাবে আয়োজনে বাধা দেওয়া হচ্ছে?
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা জানান, ভোটকে সামনে রেখে সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আঁটসাঁট করছে। কোনো কনসার্টে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে অস্থিরতা বাড়াতে পারে—এ আশঙ্কায় তারা ঝুঁকি নিতে রাজি নন।
তবে তিনি দাবি করেন, তারা কোনো কনসার্টের জন্য অনুমতি দিচ্ছেন না—প্রাইভেট কনসার্ট কিভাবে হচ্ছে সে বিষয়ে তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক তথ্য নেই।
এদিকে ১৩ ডিসেম্বরের মেইন স্টেজ আয়োজিত আতিফ আসলামের কনসার্টও মৌখিকভাবে স্থগিতের ইঙ্গিত পেয়েছে বলে জানা গেছে।
বিডি/এএন



































