আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়ে নারীদের লেখা বই পড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা

Published : ১৮:৪১, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আফগানিস্তানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নারীদের লেখা বই পড়ানোতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান প্রশাসন। চলতি বছরের আগস্টের শেষ দিকে জারি করা নির্দেশনায় জানানো হয় কোনো নারী লেখকের বই আর পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত রাখা যাবে না। সেইসঙ্গে মানবাধিকার ও যৌন হয়রানি প্রতিরোধবিষয়ক অধ্যয়নও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রায় ১৪০ জন নারী লেখকের বইসহ মোট ৬৮০টি গ্রন্থকে তালেবান সরকার ‘শরিয়াহবিরোধী’ ও ‘নীতির বিপরীত’ বলে বাতিল ঘোষণা করেছে। বিস্ময়করভাবে এর মধ্যে এমনকি রসায়ন ল্যাবরেটরির নিরাপত্তাবিষয়ক একটি বইও নিষিদ্ধের তালিকায় জায়গা পেয়েছে।
একই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১৮টি বিষয় আর পড়ানো যাবে না। এর মধ্যে অন্তত ছয়টি বিষয় সরাসরি নারীদের উন্নয়ন ও ভূমিকা-সংক্রান্ত। যেমন ‘জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’, ‘উইমেন’স সোসিওলজি’ এবং ‘দ্য রোল অব উইমেন ইন কমিউনিকেশন’।
তালেবান প্রশাসনের দাবি, এসব সিদ্ধান্ত আফগান সংস্কৃতি ও ইসলামি শরিয়াহর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই নেওয়া হয়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপপরিচালক জিয়াউর রহমান আরিউবি জানিয়েছেন, ধর্মীয় আলেম ও বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত একটি কমিটি পাঠ্যক্রম খতিয়ে দেখে এই সুপারিশ দিয়েছে।
নিষিদ্ধ গ্রন্থের তালিকায় সাবেক উপ-আইনমন্ত্রী জাকিয়া আদেলির বইও রয়েছে। তিনি বলেন, গত চার বছরে তালেবান যা করেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে পাঠ্যক্রমে এ ধরনের পরিবর্তন একেবারেই অপ্রত্যাশিত নয়। যখন নারীদের শিক্ষা গ্রহণের অধিকারই কেড়ে নেওয়া হয়েছে, তখন তাদের লেখা বা মত প্রকাশ দমন হওয়াটা স্বাভাবিক পরিণতি।
প্রকাশিত তালিকায় বিপুলসংখ্যক ইরানি লেখক ও প্রকাশকের বইও স্থান পেয়েছে। মোট ৩১০টি নিষিদ্ধ বই এসেছে ইরান থেকে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা এ সিদ্ধান্তের ফলে আফগানিস্তানের উচ্চশিক্ষা প্রায় পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। কারণ আন্তর্জাতিক জ্ঞানভাণ্ডারের সঙ্গে সংযোগ রক্ষার অন্যতম মাধ্যম ছিল এসব বই।
কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক জানিয়েছেন, এখন তারা বাধ্য হচ্ছেন নিজেরাই পাঠ্যবইয়ের অধ্যায় রচনা করতে। তবে এসব নতুন অধ্যয়নসামগ্রী আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারবে কি না, সে ব্যাপারে অনিশ্চয়তা রয়ে গেছে।
নারীশিক্ষার ওপর এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা আফগানিস্তানে নতুন কিছু নয়। ষষ্ঠ শ্রেণির পর থেকেই মেয়েদের পড়াশোনা কার্যত বন্ধ করা হয়েছে। ২০২৪ সালের শেষের দিকে ধাত্রীবিদ্যা কোর্সও বাতিল করা হয়। এবার বিশ্ববিদ্যালয়েও নারীদের লেখা গ্রন্থ ও নারীবিষয়ক পাঠ বাদ দেওয়া হলো।
বিবিসি জানিয়েছে, এ বিষয়ে মন্তব্য জানার জন্য তালেবান সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা কোনো সাড়া দেয়নি।
BD/AN