জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি তাদের নির্বাচনী প্রতীকের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে চলমান কার্যক্রম ও অবস্থান ব্যাখ্যা করেছে। শুক্রবার বিকেলে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামের বরাত দিয়ে দলের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী নিজের ফেসবুক আইডিতে বিস্তারিত ব্যাখ্যা শেয়ার করেছেন।
এনসিপি জানিয়েছে, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর থেকেই তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক ও মতবিনিময় করে আসছে। এপ্রিল মাস থেকে তারা নির্বাচন সংক্রান্ত আইন, নিবন্ধন প্রক্রিয়া, প্রবাসীদের ভোটাধিকারসহ নানা বিষয় নিয়ে কমিশনের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা করেছে।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশন নতুনভাবে নির্বাচনী প্রতীক তালিকাভুক্তির উদ্যোগ গ্রহণ করে। কমিটি গঠন করে মোট ১৫০টি প্রতীক চূড়ান্ত খসড়া তৈরি করা হয়। এনসিপির প্রতিনিধি দল ৪ জুন ২০২৫ তারিখে বৈঠকে নিশ্চিত হয় যে, চূড়ান্ত তালিকায় ‘শাপলা’ প্রতীক থাকবে।
২২ জুন ২০২৫ তারিখে এনসিপি নির্বাচন কমিশনের কাছে রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধনের আবেদন জমা দিয়ে শাপলা প্রতীক বরাদ্দের জন্য আবেদন জানায়। এরপরই দেশের মানুষ এনসিপির প্রতীক হিসেবে শাপলাকে স্বীকৃতি দিতে শুরু করে। জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত পদযাত্রা কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে শাপলা সংগ্রহ ও গ্রহণ করে।
কিন্তু ৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশন শাপলাকে নির্বাচনী প্রতীক হিসেবে তালিকাভুক্ত না করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। ১৩ জুলাই ২০২৫ তারিখে এনসিপির প্রতিনিধি দল কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে বিষয়টি তুলে ধরে, আইনি ভিত্তিতে শাপলা বরাদ্দে কোনো বাধা নেই। সংবিধান, জাতীয় প্রতীকের বিধিমালা ও ১৯৭২ সালের অর্ডারের প্রাসঙ্গিক ধারাগুলো উল্লিখিত হয়।
এনসিপি ব্যাখ্যা করেছে, জাতীয় প্রতীকের চারটি উপাদান—ধানের শীষ, শাপলা, পাটপাতা ও তারকা—আলাদা আলাদা প্রতীক হিসেবে ইতিমধ্যেই বরাদ্দ হয়েছে। সুতরাং শাপলা বরাদ্দে আইনগত কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। তারা কমিশনের স্বেচ্ছাচারী মনোভাব ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তের বিষয়টি তুলে ধরেছে।
৩ আগস্ট ২০২৫ তারিখে এনসিপি আবারও লিখিত আবেদন করে শাপলার ভিন্ন ভিন্ন ভার্সন বরাদ্দের জন্য প্রস্তুত থাকার কথা জানায়। তবে কমিশন কোনো স্থির অবস্থান প্রকাশ করেনি।
সর্বশেষ, নিবন্ধন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরও ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ তারিখে নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, শাপলা তালিকাভুক্ত নয়, ফলে এনসিপিকে শাপলা দেওয়া যাবে না। এনসিপি এই সিদ্ধান্তকে স্বেচ্ছাচারী ও অনভিপ্রেত মনে করে এবং আশা প্রকাশ করেছে যে, নির্বাচন কমিশন ২০০৮ সালের বিধিমালার সংশোধনের মাধ্যমে শাপলা, সাদা শাপলা বা লাল শাপলার মধ্যে যেকোনো একটি বরাদ্দ করবে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবে।