যেভাবে হত্যা করে ২৬ টুকরো করা হয় আশরাফুলকে

যেভাবে হত্যা করে ২৬ টুকরো করা হয় আশরাফুলকে ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১২:২৯, ১৫ নভেম্বর ২০২৫

রাজধানীতে কাঁচামাল ব্যবসায়ী আশরাফুল হকের ২৬ টুকরা মরদেহ উদ্ধারের পর সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন ছড়িয়ে পড়ে।

গত বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) হাইকোর্ট সংলগ্ন জাতীয় ঈদগাহ মাঠের প্রবেশপথের পাশে দুটি নীল ড্রামের ভেতর থেকে তার দেহাংশ পাওয়া গেলে বিষয়টি দ্রুতই জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় প্রথম থেকেই সন্দেহের তীর যায় তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু জরেজুল ইসলামের দিকে, যাকে পরে মামলার প্রধান আসামি করা হয়।

তদন্তে বেরিয়ে এসেছে এক জটিল ত্রিভুজ প্রেমের গল্প। শামীমা আক্তার নামে বিবাহিত এক নারীর সঙ্গে একই সময়ে সম্পর্ক ছিল আশরাফুল এবং জরেজুল—যা তাদের দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বে চির ধরায়। প্রেম-অভিমান আর ঈর্ষার জটিলতায় এমন ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ঘটে গেছে বলে জানায় পুলিশ।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দ্রুত সময়ের মধ্যেই ঘটনার রহস্য উদঘাটন করে। ডিবি সূত্র জানিয়েছে, প্রথমে আশরাফুলকে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করা হয় এবং এরপর মাথায় হাতুড়ির আঘাতে তাকে হত্যা করা হয়। হত্যার পর লাশ বাসায় রেখে কীভাবে সেটি গুম করা হবে—এ নিয়ে শামীমা ও জরেজুল প্রায় এক দিনের বেশি সময় ধরে নানা পরিকল্পনা করে। শেষপর্যন্ত তারা সিদ্ধান্ত নেয়, মরদেহ টুকরো করে ড্রামে ভরে এমন স্থানে ফেলে আসবে যাতে কেউ বুঝতে না পারে। সে ভাবনা থেকেই দা দিয়ে দেহ ২৬ খণ্ডে কেটে ড্রামে ভরে হাইকোর্টের সামনে ফেলে রাখা হয়।

রংপুরে একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ায় আশরাফুল ও জরেজুলের সখ্য ছিল গভীর। জরেজুলের মাধ্যমেই আশরাফুলের সঙ্গে পরিচয় হয় শামীমার। ধীরে ধীরে আশরাফুল-শামীমার মধ্যে গোপন সম্পর্ক তৈরি হয়। পরে জরেজুল ঢাকায় এসে দক্ষিণ ধনিয়ায় একটি বাসা ভাড়া নেন, যেখানে সন্তানদের কুমিল্লায় রেখে এসে শামীমাও থাকতেন। একসময় এই বাসায় আশরাফুলও যাতায়াত শুরু করেন। শামীমার সঙ্গে জরেজুলের শারীরিক সম্পর্কের কথা জানতে পেরে আশরাফুলও তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে বেরিয়ে যান জরেজুল, তবে ভুলে আশরাফুলের মোবাইল নিয়ে যাওয়ায় আবার ফিরে আসেন। ফিরে এসে দেখেন—শামীমা ও আশরাফুল একসঙ্গে ঘুমিয়ে আছেন। এরপর তিনি লুকিয়ে থেকে সুযোগের অপেক্ষা করেন।

ডিবি আরও জানায়, গভীর রাতে যখন শামীমা ও আশরাফুল আবার ঘনিষ্ঠ হন, তখন ঈর্ষায় ক্ষোভ উগরে ওঠে জরেজুলের মধ্যে। তিনি বালিশ চাপা দিয়ে আশরাফুলকে ধরেন এবং পরে হাতুড়ি দিয়ে আঘাত করেন। শামীমা তখন ঘটনাস্থলেই ছিলেন বলে তদন্তে জানা গেছে।

হত্যার পর দুই দিন মরদেহ বাসায় রেখে দেয় দুজন। পরবর্তীতে লাশ টুকরো করে দুটি ড্রামে ভরে ঈদগাহ মাঠের সামনে ফেলে দেয় এবং কুমিল্লায় পালিয়ে যায়। ড্রাম দেখে স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে এসে মরদেহ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আশরাফুল আগে একটি মামলার বাদী ছিলেন বলে তার তথ্য পুলিশের ডাটাবেজে ছিল। সিআইডি ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলিয়ে তার পরিচয় নিশ্চিত করে। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পরই ডিবি তদন্তে নামে।

ডিএমপির ডিবি-দক্ষিণের যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ নাসিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, পরকীয়া ত্রিভুজ প্রেমই এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা থেকে জরেজুলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে এবং আইনি প্রক্রিয়াও এগোচ্ছে।

ডিবি জানায়, শামীমা কুমিল্লার বাসিন্দা। তার একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে। স্বামী সৌদি আরবে কর্মরত। তিন বছর আগে ফেসবুক ও মেসেঞ্জারের মাধ্যমে তার সঙ্গে পরিচয় হয় মালয়েশিয়া প্রবাসী জরেজুলের। দেশে আসার পর তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে—যা পরবর্তীতে ঘাতক প্রেমের জটিল রূপ নেয়।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement