দেশে ৫৫ সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে অনিশ্চয়তা

Published : ১০:১২, ২২ আগস্ট ২০২৫
দেশে বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে বড় পদক্ষেপ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। এর অংশ হিসেবে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে ৫৫টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র। এ জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হলেও আশানুরূপ সাড়া না মেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন নিয়ে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। অভ্যন্তরীণ ব্যাংকগুলো দুর্বল অবস্থায় থাকায় দেশীয় অর্থায়ন সম্ভব নয়, আর বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও নিরাপত্তা নিশ্চয়তা না পেয়ে পিছিয়ে আছেন।
এর আগে ক্ষমতাসীন ফ্যাসিবাদী সরকারও একই ধরনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। তবে ৩৭টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের নামে দেশীয় ব্যাংক ঋণ ও বিদেশি অর্থ বিনিয়োগ আত্মসাৎ করে সেই প্রকল্প কার্যত ভেস্তে যায়। জুলাই বিপ্লবের পর অন্তর্বর্তী সরকার পুরোনো উদ্যোগ বাতিল করে নতুন কর্মসূচি হাতে নেয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৫,২৩৮ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার ৫৫টি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ২০২৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত চার দফায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। কিন্তু প্রথম ধাপে সাড়া না মেলায় একাধিকবার সময় বাড়াতে হয়। সর্বশেষ ১৮ জুন ছিল দরপত্র খোলার দিন।
টেন্ডারের শর্তে ৫০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি কেন্দ্রের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর বার্ষিক টার্নওভার থাকতে হবে ৮.২০ মিলিয়ন ডলার, ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল ৫৭.২০ মিলিয়ন ডলার এবং প্রতি মেগাওয়াটে পাঁচ হাজার ডলার টেন্ডার সিকিউরিটি জমা দিতে হবে। পাশাপাশি জমির জন্য স্থানীয় এসিল্যান্ড ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার ছাড়পত্রও বাধ্যতামূলক।
দরপত্রে অংশ নেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫টি প্রস্তাব দিয়েছে ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড। এছাড়া দেশ এনার্জি জমা দিয়েছে ৯টি, কনফিডেন্স ৭টি, বারাকা ৬টি ও মীর গ্রুপ ৫টি প্রস্তাব। বিভিন্ন স্থানে একাধিক কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রতিযোগিতা হয়েছে, তবে কিছু কেন্দ্রের জন্য একক দরপত্রও জমা পড়েছে।
খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের প্রকল্প বাতিল হওয়ায় বিদেশি দাতাদের বিনিয়োগে আস্থা নষ্ট হয়েছে। নতুন শর্তে জমি সংক্রান্ত জটিলতা এবং অর্থপ্রদানের ক্ষেত্রে মুদ্রাস্ফীতি সমন্বয় না থাকাও বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। এ কারণে দরপত্রকারীদের প্রস্তাব যথাযথভাবে যাচাই না হলে উদ্যোগটি ভেস্তে যেতে পারে।
জ্বালানি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সৌরবিদ্যুতে যাওয়া দেশের জন্য জরুরি, কারণ গ্যাস উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে এবং জ্বালানি আমদানিতে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে। বিদেশি বিনিয়োগ সহজ করতে নীতিগত সংস্কার আনাও প্রয়োজন।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বহু প্রতিষ্ঠান টেন্ডারে অংশ নিয়েছে। স্বাধীন কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই চলছে। যোগ্যতা পূরণ করা কোম্পানিগুলোকেই কাজ দেওয়া হবে।
BD/AN