বিদেশে পরিচয়, দেশে বিয়ে—জেমস-নামিয়ার গল্প

Published : ২২:০৫, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
বাংলা ব্যান্ড সংগীতের কিংবদন্তি তারকা নগর বাউল জেমস নিজের জীবনের এক নতুন অধ্যায় প্রকাশ করলেন। ৬১ বছর বয়সে এসে তিনি শুধু তৃতীয় বিয়ের খবরই জানাননি, জানিয়েছেন পুত্রসন্তানের জন্মের সুখবরও। এই দুটি খবর একসঙ্গে প্রকাশ পেয়ে পুরো সংগীতজগতে ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে তৈরি করেছে আলোড়ন।
২০২৩ সালে নগর বাউলের যুক্তরাষ্ট্র সফরেই জেমসের জীবনে এই নতুন সম্পর্কের সূচনা। লস অ্যাঞ্জেলেসে এক কনসার্টে তার সঙ্গে পরিচয় হয় নামিয়া আমিনের, যিনি একজন প্রশিক্ষিত নৃত্যশিল্পী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পরিচিত মুখ। পরিচয়ের সূত্র ধরেই শুরু হয় ঘনিষ্ঠতা, যা ধীরে ধীরে গড়ায় ভালোবাসা ও পরিণয়ে।
আমেরিকা সফর শেষে দেশে ফিরে এলেও জেমসের সঙ্গে যোগাযোগ থেমে থাকেনি নামিয়ার। ভালোবাসার টানে তিনিও বাংলাদেশে চলে আসেন, আর সেই সূত্রেই ২০২৪ সালের ১২ জুন তারা বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। এরপর থেকে দু’জন একসঙ্গেই বসবাস করছেন ঢাকার বনানীতে জেমসের নিজ বাসভবনে।
বিয়ের এক বছরের মাথায় তাদের সংসারে আসে নতুন প্রাণের স্পন্দন। ২০২৫ সালের ৮ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রাত ৩টা ৩৫ মিনিটে নিউইয়র্কের হান্টিংটন হাসপাতালে জন্ম নেয় তাদের প্রথম পুত্রসন্তান। সন্তানের নাম রাখা হয়েছে জিবরান আনাম। এই আনন্দের খবর প্রকাশের পর থেকেই জেমসের ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা অভিনন্দনের বন্যায় ভাসাচ্ছেন প্রিয় শিল্পীকে। অনেকে বলছেন, পুত্রসন্তানের আগমন জেমসের জীবনে এক নতুন মোড় আনবে, যা তার সংগীত ও ব্যক্তিজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
নামিয়া আনাম যুক্তরাষ্ট্রে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। তার বাবা-মা নুরুল আমিন ও নাহিদ আমিন দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রেই স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ছোটবেলা থেকে আমেরিকার সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে ওঠা নামিয়া এখন বাংলাদেশের সংগীততারকার জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। দূরদেশে শুরু হওয়া তাদের সম্পর্ক আজ একটি সন্তানের মাধ্যমে পেয়েছে পূর্ণতা।
এটি জেমসের জীবনের তৃতীয় বিয়ে। এর আগে তিনি চিত্রনায়িকা রথি ও বেনজীর সাজ্জাদের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। প্রথম স্ত্রী রথির ঘরে তার দুই সন্তান — দানিশ ও জান্নাত — যারা এখন প্রাপ্তবয়স্ক এবং নিজ নিজ কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠিত।
দ্বিতীয় স্ত্রী বেনজীর সাজ্জাদ বর্তমানে তাদের মেয়ে জাহানকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ডালাসে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। জানা যায়, ২০১৪ সালে বেনজীরের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার সিদ্ধান্ত এবং জেমসের বাংলাদেশ ও সংগীতজীবনের প্রতি অঙ্গীকারের পার্থক্যই তাদের বিচ্ছেদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পারস্পরিক বোঝাপড়ার ভিত্তিতে তারা তখন পৃথক জীবন শুরু করেন।
দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও জীবনের নানা উত্থান–পতনের পর এই বয়সে পুত্রসন্তান লাভকে জেমসের ঘনিষ্ঠ মহল একটি নতুন সূচনা হিসেবে দেখছেন। তাদের মতে, এই শিশুর আগমন তার জীবনে নতুন দায়িত্ব, প্রশান্তি ও সৃষ্টিশীল অনুপ্রেরণা এনে দেবে।
নতুন জীবনের অনুভূতি ব্যক্ত করে জেমস বলেন,
“আল্লাহর অশেষ কৃপায় ভালো আছি। যতদিন বাঁচি, গান গেয়ে যেতে চাই। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, যেন সংগীতের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারি।”
তার এই বক্তব্যে প্রকাশ পায় গভীর কৃতজ্ঞতা এবং জীবনের প্রতি এক নব উদ্যম।
ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের বিশ্বাস, জেমসের এই নতুন জীবনযাত্রা তার সংগীতে নতুন মাত্রা যোগ করবে—যেমনভাবে তার প্রতিটি গান শ্রোতাদের হৃদয়ে অমর হয়ে আছে, তেমনি এই অধ্যায়ও বাংলা সংগীতকে আরও সমৃদ্ধ করবে।
বিডি/এএন