রোহিঙ্গাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি আনুষ্ঠানিকভাবে শপথ নিলেন

Published : ০০:১১, ২৪ অক্টোবর ২০২৫
দীর্ঘ নয় বছর পার হলেও রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধান এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। প্রত্যাবাসনের অন্যতম বড় প্রতিবন্ধকতা ছিল জাতিসংঘ স্বীকৃত বিশ্বের অন্যতম নিপীড়িত জনগোষ্ঠী রোহিঙ্গাদের অভ্যন্তরীণ ঐক্য এবং প্রতিনিধিত্বশীল নেতৃত্বের অভাব।
এই ঘাটতি পূরণ ও নিজেদের দেশ মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার আশা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা এবার গঠন করেছে নাগরিক সংগঠন ‘ইউনাইটেড কাউন্সিল অব রোহাং’ (ইউসিআর), যা রোহিঙ্গাদের জন্য গ্রহণযোগ্য মতামতের ভিত্তিতে আত্মপ্রকাশ করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৪টায় উখিয়ার ১৬ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের কমিউনিটি সেন্টারে ইউসিআরের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের শপথ গ্রহণ ও আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার আবু সালেহ মোহাম্মদ ওবায়দুল্লাহ, এবং এটি সংগঠনটির সমন্বয় কমিটির আয়োজনে সম্পন্ন হয়। অনুষ্ঠানে শপথ নেন ‘কংগ্রেস অব কাউন্সেলরস’-এর সভাপতি ও সদস্যরা।
সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক মোহাম্মদ ফুরকান মির্জা বলেন, “আমরা প্রমাণ করেছি রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীলভাবে নিজেদের সংগঠিত করতে পারে। ইউসিআর আমাদের ঐক্য, জবাবদিহিতা এবং মর্যাদাপূর্ণ ভবিষ্যতের প্রতীক।”
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের অনুমতিতে কক্সবাজারের ৩৩টি ক্যাম্পে প্রতিনিধি নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ব্রিফিংয়ে ইউসিআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এটি রোহিঙ্গাদের বৈধভাবে প্রতিনিধিত্বের প্রথম আনুষ্ঠানিক নাগরিক সংগঠন।
সংগঠনটি জানায়, রোহিঙ্গারা বহু বছর ধরে মিয়ানমারে গণহত্যা, নিপীড়ন ও উচ্ছেদের শিকার। প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েও তাদের জন্য এখনো স্থায়ী সমাধান আসেনি। ইউসিআর মনে করে, তাদের আত্মপ্রকাশ রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ঐক্য এবং স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ।
প্রথম ধাপে ৩৩টি ক্যাম্প থেকে মোট ৩,৬৯৩ জন ভোটার অংশ নেন। ভোটাররা এসেছেন ১৪টি শ্রেণি থেকে—ইমাম, মুহতামিম, ছাত্র, শিক্ষক, ওকতা (চেয়ারম্যান), নারী প্রতিনিধি, সোশ্যাল মিডিয়া কর্মী, হেড মাঝি, প্রবীণ নাগরিক, কমিউনিটি ডাক্তার, ব্যবসায়ী, যুবক, ক্যাম্পভিত্তিক সংগঠন ও প্রবাসী রোহিঙ্গা। ভোটারদের ক্যাম্প ও এলাকা ভিত্তিতে আটটি ভৌগোলিক অঞ্চলে ভাগ করা হয়।
নির্বাচনের আগে প্রতিটি অঞ্চলে সভা করে ভোট প্রক্রিয়া, সময়সূচি ও কেন্দ্রের তথ্য জানানো হয়। আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য না হলে ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হয়। সব ফলাফল যথাযথভাবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গঠিত হয় ৫০০ সদস্যের কাউন্সেলর কংগ্রেস, যার মধ্যে ২৮ জন নির্বাহী সদস্য এবং ৫ জন সভাপতি নির্বাচিত হন।
উল্লেখ্য, সভাপতির নেতৃত্ব প্রতি ৬ মাসে পরিবর্তিত হবে এবং ৩ বছরের মেয়াদ শেষে নতুন কংগ্রেস আহ্বান করা হবে। পুরো প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা, নিরপেক্ষতা ও যোগ্যতাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনাকারী সমন্বয় কমিটির সদস্য ও তাদের নিকট আত্মীয়রা প্রার্থী হতে পারেননি। এটি সম্পূর্ণ নিচু স্তর থেকে গঠিত একটি সংগঠন, যা রোহিঙ্গা ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঐক্যবদ্ধ নাগরিক সমাজ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
ইউসিআরের নেতারা জানান, এই সংগঠন রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী নেতৃত্ব এবং সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে। এটি আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় দাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ সহজ করবে, শিবিরে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহায়তা করবে এবং রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক ও টেকসই ভবিষ্যতের পথ নির্দেশ করবে।
বিডি/এএন