ফ্রান্স ফেরত অভিবাসী ফের নৌকায় যুক্তরাজ্যে

ফ্রান্সে ‘ওয়ান ইন ওয়ান আউট’ চুক্তির আওতায় ফেরত পাঠানো এক অনিয়মিত অভিবাসী আবারও নৌকায় চড়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে ফিরে এসেছেন। ব্রিটিশ সরকারের একটি সূত্র বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

সূত্রটি জানিয়েছে, বর্তমানে ওই অভিবাসীকে আটক রাখা হয়েছে এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যত দ্রুত সম্ভব তাকে আবারও ফ্রান্সে ফেরত পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

দ্য গার্ডিয়ান জানায়, ওই অভিবাসী যুক্তরাজ্যে আশ্রয় চাইছেন। তিনি দাবি করেছেন, ফ্রান্সের উত্তরাঞ্চলে মানবপাচারকারীদের একটি চক্রের হাতে তিনি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ব্যক্তি ইরানের নাগরিক। ১৯ সেপ্টেম্বর তিনি যুক্তরাজ্য থেকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছিল, যা ছিল চুক্তির আওতায় তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে ফেরত পাঠানোর ঘটনা। কিন্তু ১৮ অক্টোবর তিনি আবারও ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে ব্রিটিশ ভূখণ্ডে প্রবেশ করেন।

চলতি বছরের গ্রীষ্মে স্বাক্ষরিত ফ্রান্স-যুক্তরাজ্য অভিবাসন চুক্তি অনুযায়ী, ছোট নৌকায় যুক্তরাজ্যে পৌঁছানো অভিবাসীদের ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হবে। বিনিময়ে, ফ্রান্সে থাকা কিছু অভিবাসীকে যুক্তরাজ্যে নেওয়া হবে।

এই নীতি ‌‘ওয়ান ইন, ওয়ান আউট’ হিসেবে পরিচিত। তবে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এই চুক্তির কঠোর সমালোচনা করেছে। তাদের দাবি, এটি অভিবাসীদের জন্য অনিরাপদ পরিস্থিতি তৈরি করছে। ব্রিটিশ ও ফরাসি সরকার বলছে, চুক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো ইংলিশ চ্যানেল দিয়ে অনিয়মিত পারাপার বন্ধ করা।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চুক্তি কার্যকর হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট ৪২ জন অভিবাসীকে ফ্রান্সে ফেরত পাঠানো হয়েছে। একই সময়ে, ফ্রান্স থেকে ২৩ জনকে যুক্তরাজ্যে আনা হয়েছে। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে নানা পদক্ষেপ নিয়েছেন, কিন্তু ছোট নৌকায় পারাপার রোধে সরকার এখনও ব্যর্থ।

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরে ৩৬ হাজার ৭৩৪ জন অভিবাসী ছোট নৌকায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন। এটি ইতোমধ্যে ২০২৪ সালের মোট সংখ্যা (৩৬ হাজার ৮১৬) অতিক্রম করেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাবানা মাহমুদ বলেছেন, “এটি স্পষ্ট, আমাদের আরও দ্রুত এবং কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। অনিয়মিতভাবে থাকা ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দেওয়া এবং ছোট নৌকায় পারাপার রোধ করাই এখন প্রধান লক্ষ্য।”

তিনি আরও বলেন, বুধবার যুক্তরাজ্য সরকার বলকান অঞ্চলের কয়েকটি মানবপাচার চক্রের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এই ঘোষণা এসেছে লন্ডনে আয়োজিত এক আঞ্চলিক সম্মেলনের সময়।

গত এক বছরে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ ৩৫ হাজার অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৩ শতাংশ বেশি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, সরকার অভিবাসন প্রক্রিয়া সংস্কারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং মানবপাচার বন্ধে ফ্রান্স ও অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতা আরও জোরদার করছে।