গাজার গণহত্যা: ভিকটিমদের স্মৃতি চিরস্থায়ী

গাজার গণহত্যা: ভিকটিমদের স্মৃতি চিরস্থায়ী ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১২:৩২, ১০ অক্টোবর ২০২৫

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় দুবছর ধরে বর্বর আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরাইল। সে সঙ্গে চলছে গণহত্যা, ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজার বিবিধ অবকাঠামো। সংকট চলছে খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপণ্যে।

গাজায় যেসব ঘটনা ঘটছে, তা কেবল মানবিক বিপর্যয়ই নয়, এটি একটি রাজনৈতিক অপরাধও। যার গভীর ঐতিহাসিক ও ভূরাজনৈতিক পরিণতি রয়েছে।

গাজার বর্তমান পরিস্থিতি এতটাই করুণ যে, এখানে মানবাধিকার, শান্তি ও নিরাপত্তার ওপর আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের দুর্বলতাগুলো বিশ্ববাসীর সামনে উন্মোচিত হয়েছে। কারণ, বিশ্বনেতাদের বক্তব্য বা আলোচনা ইসরাইলের চলমান গণহত্যা বা ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করার কিছুই বন্ধ করতে পারেনি। গাজা এখন বিশ্বের বৃহত্তম উন্মুক্ত কবরস্থানগুলোর একটি।

এভাবে নিরীহ-নিরপরাধ ফিলিস্তিনিদের হত্যা বিশ্ববিবেককে জাগ্রত করেছে। মানবতা এবং ন্যায়বিচারের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে বিশ্ববাসী, বিশেষ করে পশ্চিমা বিশ্ব। ইসরাইলি বাহিনীর হাতে হাজার হাজার পুরুষ, নারী ও শিশু হত্যার নিন্দায় বিশ্বব্যাপী লাখো কণ্ঠ সোচ্চার হয়েছে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ বেশ কিছু দেশ এবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দিয়েছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে এই ভূখণ্ডে যা ঘটেছে, তা আধুনিক যুগে মানবতার বিরুদ্ধে সবচেয়ে জঘন্য অপরাধের একটি। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস নির্মূলের নামে পুরো সময়টা সেখানকার বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, মানবিক সাহায্য অবরুদ্ধ করা হয়েছে এবং পুরো এলাকা মানচিত্র থেকে মুছে ফেলা হয়েছে। ‘খাদ্য’কে ফিলিস্তিনিদের নির্মূল করার একটি প্রক্রিয়া হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে হাজার হাজার ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।

জাতিসংঘ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থা অসংখ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, ইসরাইল গাজা যুদ্ধে স্পষ্টত আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন করেছে, বৈশ্বিক নিয়ম ও কনভেনশন উপেক্ষা করেছে।

ইসরাইলের এই নৃশংস আগ্রাসন কেবল একটি মানবিক ট্র্যাজেডিই নয়, এটি একটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত; যা অনেক দেশকে সংঘাতের বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। এছাড়া এটি গাজার ভুক্তভোগী মানুষদের দুর্বিষহ স্মৃতি কীভাবে সংরক্ষণ এবং ইসরাইলের ভয়াবহ অপরাধের পুনরাবৃত্তি রোধ করা যায়Ñসে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।

শুধু গণহত্যাই নয়, ধ্বংস করেছে এ অঞ্চলের সব হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র। পাশাপাশি বেসামরিক নাগরিকদের বাড়িতে বোমা হামলাও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এসব কর্মকাণ্ড চালানোর জন্য ইসরাইল ব্যবহার করেছে আন্তর্জাতিকভাবে নিষিদ্ধ অস্ত্র।

একই সময় ‘নিরাপদ অঞ্চল’ হিসেবে চিহ্নিত আল-মাওয়াসির মতো স্থানে ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তর করেছে ইসরাইল। যেখানে লাখো ফিলিস্তিনিকে আশ্রয় নিতে হয়েছে তাঁবু বা অস্থায়ী শিবিরে। তারপরও থেমে থাকেনি ইসরাইলের বর্বর বোমা হামলা। এসব অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রেও হরহামেশাই বোমা হামলা চালাচ্ছে তারা।

এই গণহত্যার স্মৃতি বিশ্বব্যাপী চেতনা ও বিবেকের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে। যাতে এই নৃশংসতার পুনরাবৃত্তি ভবিষ্যতে আর না হয়। একইসঙ্গে ন্যায়বিচারের জন্য ইসরাইলের ওপর ক্রমাগত চাপ অব্যাহত রাখতে হবে। এ জন্য এমনসব তথ্যচিত্র ও ফিচার ফিল্ম তৈরি করা দরকারÑযা গাজা পরিস্থিতিকে জীবন্ত সাক্ষ্য হিসেবে অমর করে রাখবে বিশ্ববাসীর কাছে। আর এমন মানবিক ভাষায় এই ভয়াবহতা বর্ণনা করতে হবে, যা বিশ্বব্যাপী মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারে।

গাজার ভেতরে এবং বাইরে জাদুঘর স্থাপন করা উচিত, যাতে ইসরাইলের অপরাধের নথিভুক্তিকরণ, ধ্বংসযজ্ঞ প্রদর্শন এবং ভুক্তভোগীদের গল্প বর্ণনা করা যায়। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাতের ওপর শিক্ষামূলক উপকরণ বিশ্বব্যাপী স্কুলের পাঠ্যক্রমের মধ্যে গভীরভাবে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি হয়। এছাড়া জাতিসংঘ কর্তৃক আয়োজিত এবং বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালন করা গাজায় গণহত্যা স্মরণে একটি বিশ্বব্যাপী দিবসও হওয়া উচিত।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement