কোনো কাজে দক্ষতাও নেই, সুযোগও নেই ইঁদুর আর পাখি শিকার করে চলে তাদের সংসার

কোনো কাজে দক্ষতাও নেই, সুযোগও নেই ইঁদুর আর পাখি শিকার করে চলে তাদের সংসার ছবি: বিজনেস ডেইলি

রংপুর প্রতিনিধি

Published : ০০:০৮, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫

স্মার্ট, ডিজিটাল এবং আধুনিক যুগেও সভ্যতার আলো থেকে অনেক দূরে রয়েছে সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর একদল মানুষ এখনো প্রকৃতির আদিম জীবনযাত্রার ওপর নির্ভরশীল।

গাইবান্ধা, জয়পুরহাট, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলাসহ  দেশের বিভিন্ন জেলার সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ পূর্বপুরুষদের পেশা আঁকড়ে ধরে শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গৌরীপুর এলাকায় দেখা যায়, কাঁধে বাঁশের ঝুড়ি, হাতে ফাঁদ ও বাঁশি, ব্যাগে সদ্য ধরা কয়েক ডজন ইঁদুর নিয়ে সাঁওতাল শিকারিগণ মাঠের দিকে যাচ্ছেন।

শিকারি লক্ষীরাম সরেন বলেন, বাপ-দাদার সময় থেকে এই পেশা চলে আসছে। ধানক্ষেতের ইঁদুর আর পাখি শিকার করেই সংসার চলে। অন্য কোনো কাজে দক্ষতাও নেই, সুযোগও পাই না। ধানক্ষেতে ইঁদুর অনেক ক্ষতি করে। আমরা যখন তাদের ধরি আর খাই, তখন আমাদের পেটও ভরে, আবার জমিরও উপকার হয়।

আরেক শিকারি বিশু সরেনের চোখে ভবিষ্যৎ নিয়ে কিছুটা আশা রয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়েরা পড়াশোনা করুক, ভালো চাকরি পাক এাঁ আমরা চাই। কিন্তু আপাতত শিকারের ওপরই ভরসা। প্রবীণ শিকারি সুদাম মার্ডি বলেন, বাজারের জিনিসপত্রের দাম এখন অনেক বেশি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা পুরোনো পেশা ধরে রেখেছি।

ঠাকুরগাঁও জেলা সাঁওতাল কল্যাণ পরিষদের সভাপতি পলাশ হেমব্রম বলেন, শিকার আমাদের শত বছরের ঐতিহ্য। কিন্তু এখন সময় বদলে গেছে। নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগ করা জরুরি। সরকার ও এনজিও একসঙ্গে কাজ করলে আমরা বিকল্প জীবিকা বেছে নিতে পারব। পরিবেশবিদগণ, নির্বিচারে বন্য প্রাণি শিকার পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।

পরিবেশকর্মী আলমগীর হোসেন বলেন, শুধু ইঁদুর নয়, অনেক সময় পাখি, গুইসাপ, এমনকি খরগোশও শিকার করা হয়। এতে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ইশরাত ফারজানা বলেন, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মানুষদের আধুনিক পেশায় যুক্ত করতে দক্ষতা উন্নয়ন, ক্ষুদ্র ঋণ ও বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। একই সঙ্গে বন্য প্রাণি রক্ষায় তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো হবে।
 

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement