ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধের দাবি, হাদী হত্যাচেষ্টার প্রেক্ষাপটে

ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধের দাবি, হাদী হত্যাচেষ্টার প্রেক্ষাপটে ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০২:৫৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

ঢাকা-৮ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদীর ওপর চালানো হত্যাচেষ্টার পেছনে ভারতের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্নের দাবি জানিয়েছে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদ।

একই সঙ্গে অবিলম্বে ঢাকায় অবস্থিত ভারতীয় হাইকমিশন বন্ধ ঘোষণা এবং সেখানে কর্মরত সকল কূটনীতিককে বহিষ্কারের আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি।

মঙ্গলবার (১৬ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে মহান বিজয় দিবস ও জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের প্রথম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক মিলাদ মাহফিলে শরীফ ওসমান হাদীর দ্রুত আরোগ্য কামনার পাশাপাশি এসব দাবি তুলে ধরা হয়।

মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে শাহী বাংলা, ফরায়েজী আন্দোলন, বাঁশের কেল্লা আন্দোলনসহ বিভিন্ন ঐতিহাসিক সংগ্রামের শহীদ, পাকিস্তান আন্দোলনের নেতাকর্মী, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ এবং চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের সকল শহীদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হয়।

দোয়া মাহফিলের আগে বক্তব্যে জাতীয় বিপ্লবী পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক মোহাম্মদ শামসুদ্দীন দাবি করেন, সরাসরি ভারতের ইন্ধনেই শরীফ ওসমান হাদীকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ভারতের নাগরিকদের একটি অংশ প্রকাশ্যে উল্লাস করে জানিয়েছে যে, হামলাকারীরা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর এজেন্ট। হামলাকারীদের পরিচয় ও তাদের অতীত কার্যক্রম পর্যালোচনা করলে এ দাবির সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। তার ভাষায়, অভিযুক্তরা ভারতের এজেন্ট হিসেবে পরিচিত জাহাঙ্গীর কবির নানকের প্রশিক্ষিত ক্যাডার, যা হাদী হত্যাচেষ্টায় ভারতের সম্পৃক্ততাকে স্পষ্ট করে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের খুনি ও দণ্ডপ্রাপ্ত অপরাধীদের জন্য ভারত দীর্ঘদিন ধরে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করছে। এ কারণে ভারতকে কোনোভাবেই বন্ধুরাষ্ট্র বলা যায় না; বরং তাদের আচরণ বৈরী রাষ্ট্রের মতো। গত ৫৪ বছর ধরে সীমান্তে ভারতের বিএসএফ আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে গুলিবর্ষণের মাধ্যমে বাংলাদেশিদের হত্যা করে আসছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। এই প্রেক্ষাপটে নয়াদিল্লির সঙ্গে ঢাকার কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করা জরুরি বলে মত দেন তিনি।

এ সময় তিনি আরও বলেন, ফজলুল কাদের চৌধুরী, খান এ সবুর কিংবা মাহমুদুন্নবী চৌধুরীর মতো রেজাকারদের কারও দাঁড়ি-টুপি ছিল না। অথচ আজ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দাঁড়ি-টুপি পরিয়ে ইতিহাস বিকৃত করা হচ্ছে এবং স্বাধীনতা সংগ্রামকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বাঙালির সংগ্রাম হিসেবে উপস্থাপন করে একটি ভারতীয় বয়ান প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চলছে। তিনি অভিযোগ করেন, ইন্দিরা গান্ধীর ভারতীয় পার্লামেন্টে দেওয়া ‘হাজার বছরের বদলা’ বক্তব্যকে সামনে এনে ১৬ ডিসেম্বরকে হাজার বছরের শাসনের প্রতিশোধের দিন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

যুগ্ম আহ্বায়ক সাইয়েদ কুতুব তার বক্তব্যে বলেন, জুলাই গণহত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি শেখ হাসিনা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে মিলে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যাহত করার ষড়যন্ত্র করছে।

সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই জুলাই বিপ্লবীদের হত্যার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তার দাবি অনুযায়ী, জুলাই বিপ্লবের অন্যতম কণ্ঠস্বর শরীফ ওসমান হাদীকে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করার ঘটনাও সেই ষড়যন্ত্রের অংশ। তিনি বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমতে হাদী এখনো নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন এবং তারা তার পূর্ণ সুস্থতা কামনা করেন।

তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, খুনি শেখ হাসিনাসহ সকল হত্যাকারীকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ভারতের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। পাশাপাশি দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়—ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে এবং ভারতের দালালদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে।

 

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement