সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় ওড়াঁও সম্প্রদায়ের কারাম উৎসব যেন এক মিলনমেলা

সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রত্যাশায় ওড়াঁও সম্প্রদায়ের কারাম উৎসব যেন এক মিলনমেলা ছবি: বিজনেস ডেইলি

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৬:৪৯, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় ঠাকুরগাঁওয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ওড়াঁও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় উৎসব—কারাম পূজা। বর্ণাঢ্য আয়োজনে অনুষ্ঠিত এই উৎসব ঘিরে নাচ-গান আর ঢাক-ঢোলের তালে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো গ্রাম।

প্রতি বছরের ন্যায় এবারও জাতীয় আদিবাসী পরিষদ ঠাকুরগাঁও  জেলা শাখার আয়োজনে সদর উপজেলার সালন্দর পাঁচপীরডাঙ্গা গ্রামেআয়োজন করা হয় কারাম পূজা। প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রাখতে আদিকাল থেকে ওড়াঁও সম্প্রদায় উপবাস থেকে  কারাম বৃক্ষের ডাল মাটিতে পুঁতে পূজা-অর্চনা করে আসছেন। পূজা শেষে ঢাক-ঢোলের তালে নৃত্য-গানে মেতে ওঠেন নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর সকলেই।

আদিবাসী ওড়াঁও সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব কারাম পূজা ঘিরে রঙিন সাজে সেজেছে গোটা গ্রাম। বংশ পরম্পরায় চলে আসা এই উৎসব শুধু ধর্মীয় আচার নয়—এটি হয়ে উঠেছে মিলনমেলা ও আনন্দ-উৎসবের প্রতীক।

জানা যায়, ভাদ্র মাসের শেষ রাত ও আশ্বিনের শুরুতে কারাম উৎসব উদযাপনের জন্য আদিবাসী(ওঁরাও) নর-নারী সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পূজার প্রথম দিন উপোস থাকেন। উপোসের মধ্য দিয়ে কারাম পূজা শুরু করেন ওঁরাও নারীরা।

পরদিন সন্ধ্যায় মাদল,ঢোল,করতাল ও ঝুমকির বাজনার তালে তালে নেচে-গেয়ে এলাকা থেকে কারাম গাছের (খিল কদম) ডাল তুলে আনেন তারা।

পরে তাঁরা একটি পূজার বেদি নির্মাণ করেন। সূর্যের আলো পশ্চিমে হেলে গেলে সেই কারাম গাছের ডালটি পূজার বেদিতে রোপণ করা হয়। এরপরেই সেখানে হাত পা দুলিয়ে নেচে গেয়ে উৎসবে মেতে উঠেন ওরাও আদিবাসীরা। এরপর ঢাক-ঢোলের তালে তালে নাচ, গান আর গল্প বলার মধ্য দিয়ে জমে ওঠে উৎসবের আসর।

জেলা জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার কোষাধ্যক্ষ  বনি কেরকেটা,বলেন,বিপদ-আপদ থেকে মুক্তি, ভালো ফসল আর সুখ-সমৃদ্ধির আশায় আমরা প্রতিবছর এই পূজা পালন করি।

একই রঙের পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে নৃত্য পরিবেশন করে গ্রামের নারী-পুরুষ। ছোট-বড়, সব বয়সী মানুষদের পদচারণায় কারাম উৎসব পরিণত হয় আনন্দঘন মিলন মেলায়।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদ,ঠাকুরগাঁও জেলা শাখার উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ইমরান হোসেন চৌধুরী বলেন, অনুষ্ঠানটিকে আরও ভালোভাবে করার সরকারি সহযোগিতা কামনা করেন জাতীয় আদিবাসী পরিষদ এই উপদেষ্টা।

কারাম উৎসব উপভোগ করতে স্থানীয়দের পাশাপাশি অন্য জেলা থেকেও আসেন অনেকে। নাচ-গান ও ঢাক-ঢোলের তালে মুগ্ধ হন দর্শনার্থীরা।

ঢাক-ঢোলের শব্দ আর নাচ-গান মুগ্ধ দর্শকরাও তাই প্রতিবছর এই উৎসব দেখেতে ছুটে আসেন অনেকে।
পূজা শেষে কারাম বৃক্ষের ডাল আনুষ্ঠানিকভাবে নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে এ বছরের কারাম পূজার। তবে উৎসবের রঙিন স্মৃতি থেকে যায় মানুষের হৃদয়ে।

ঠাকুরগাঁও  সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: খায়রুল ইসলাম -ওড়াঁও সম্প্রদায়ের এই কৃষ্টি কালর্চার যাতে যুগ ‍যুগ ধরে টিকে থাকে সেজন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে জানান সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা।

শুধু পূজা নয়—কারাম উৎসব হয়ে উঠেছে সুখ-শান্তি কামনার পাশাপাশি সম্প্রীতি আর সহাবস্থানের সবচেয়ে বড় প্রতীক।

১৬ সেপ্টেম্বর থেকেই শুরু হয় তাদের তিনদিন ব্যাপী উৎসবটি। আগামীকাল ১৯ সেপ্টেম্বর সকালে কারাম গাছের ডাল নদীতে বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে তাদের এই উৎসব।

BD/AN

শেয়ার করুনঃ
Advertisement