ইসলাম কি বলে নারী-পুরুষের বন্ধুত্ব নিয়ে?
Published : ০২:১২, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
বন্ধুত্ব মানুষের জীবনে এক গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য সম্পর্ক। প্রকৃত বন্ধুত্বের ভিত্তি হলো নির্ভরতা, সহমর্মিতা, সহযোগিতা এবং আন্তরিক ভালোবাসা।
একাকিত্ব কাটানো বা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার পথে একজন সত্যিকারের বন্ধু যে কোনো সম্পদ বা সুবিধার চেয়ে বেশি মূল্যবান। তবে আধুনিক যুগে বন্ধুত্বের রূপ বদলেছে; এখন তা সোশ্যাল মিডিয়ার অন্তহীন চ্যাট, আবেগের বিনিময় এবং অনাবশ্যক মেলামেশার সঙ্গে জড়িত। এই নতুন রূপ যতই আকর্ষণীয় মনে হয়, এর পেছনে লুকিয়ে আছে সূক্ষ্ম নৈতিক ঝুঁকি।
ইসলাম মানবিক সম্পর্ককে নিষিদ্ধ করেনি; বরং তা পরিশুদ্ধ ও সংযমী সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করে। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
“মুমিন পুরুষদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে ও লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র।” (সুরা আন-নূর, আয়াত ৩০)
এবং নারীদের জন্য একই নির্দেশ,
“মুমিন নারীদের বলুন, তারা যেন দৃষ্টি নত রাখে, লজ্জাস্থান সংরক্ষণ করে এবং নিজেদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে।” (সুরা আন-নূর, আয়াত ৩১)
এই আয়াতগুলো সম্পর্কের নৈতিক সীমানা নির্ধারণ করে। শালীনতা হলো আত্মার রক্ষা, আর সংযম হলো চরিত্রের অলংকার।
রাসুলুল্লাহ সা. সতর্ক করেছেন,
“যখন কোনো নারী ও পুরুষ নির্জনে অবস্থান করে, তখন তাদের তৃতীয় জন হয় শয়তান।” (তিরমিজি, হাদিস ১১৭১)
অতএব, ইসলাম বন্ধুত্ব নিষিদ্ধ করেনি, তবে সীমাহীন ও অপ্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠতার ক্ষেত্রে সতর্কতার প্রয়োজনীয়তা জোর দিয়ে উল্লেখ করেছেন।
ইমাম ইবনু কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন,
“নারী–পুরুষের অপ্রয়োজনীয় ঘনিষ্ঠতা হৃদয়ের রোগ সৃষ্টি করে, যা পাপের দ্বার উন্মুক্ত করে।” (আল–জাওয়াবুল কাফি, পৃ. ১২৪)
এবং নববী (সা.) বলেছেন,
“যে সম্পর্ক মানুষকে আল্লাহর স্মৃতি থেকে দূরে নিয়ে যায়, তা বন্ধুত্ব নয়, বরং তা ফিতনার সূচনা।”
আজকের ‘স্মার্ট বন্ধুত্ব’ বা ‘বেস্ট ফ্রেন্ড কালচার’ প্রায়ই আবেগের জোয়ারে শুরু হয়ে গুনাহের স্রোতে শেষ হয়। মোবাইলের আড়ালে গড়ে ওঠা এই সম্পর্ক নিরীহ কথোপকথন দিয়ে শুরু হয়ে আত্মিক শূন্যতায় শেষ হয়। ইসলাম এই ধরনের ঝুঁকি থেকে বাঁচার জন্য শালীনতা ও সংযমের কঠোর বিধান দিয়েছে।
তবে ইসলাম কোনো কাল্পনিক বিচ্ছিন্নতা চায় না। শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র বা সামাজিক দায়িত্বে নারী–পুরুষের সহযোগিতা হতে পারে, তবে তা অবশ্যই উদ্দেশ্যনির্ভর, সম্মাননির্ভর এবং সীমানার মধ্যে আবদ্ধ হতে হবে।
যখন বন্ধুত্ব আত্মার উন্নতি ঘটায়, তখন তা পবিত্র হয়; নয়তো এটি পরিণত হয় আত্মপ্রবঞ্চনায়। ইসলামের বার্তা আজকের তরুণ প্রজন্মের জন্য স্পষ্ট: অন্যের হৃদয় নয়, নিজের নৈতিকতা ও ঈমানকে জয় করো। বন্ধুত্ব নয়, বরং ভ্রাতৃত্বই ইসলামের ভাষা; যেখানে সম্পর্কের ভিত্তি আবেগ নয়, ঈমান।v
বিডি/এন


































