বিসিএস ক্যাডার হয়েও যোগ দিচ্ছেন না হাবিব, হবেন কৃষি উদ্যোক্তা

বিসিএস ক্যাডার হয়েও যোগ দিচ্ছেন না হাবিব, হবেন কৃষি উদ্যোক্তা

সাফল্য ডেস্ক:

Published : ১৪:০৯, ৮ জুলাই ২০২৫

‘৪৪তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েও তাতে যোগ না দিয়ে ‘কৃষি উদ্যোক্তা’ হওয়ার পথ বেছে নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হাবিব রহমান’। সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে এমন একটি সংবাদ বেশ কয়েকদিন ধরে আলোচিত হচ্ছিল। 

গণমাধ্যমকে হাবিব রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, ‌৪৪তম বিসিএস পরীক্ষায় পোস্টাল ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তিনি। তবে সেদিকে না গিয়ে উদ্যোক্তা হতে চান।

জানা যায়, কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বরকামতা ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের সন্তান হাবিব। শিক্ষাজীবনের শুরু গ্রামেই। বাগমারী ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসা থেকে এসএসসি পাস করে ঢাকায় আসেন উচ্চশিক্ষার জন্য।

পরে নটর ডেম কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগে। সেখানে ৪ বছরের স্নাতক শেষ করে এমবিএ সম্পন্ন করেন আইবিএ থেকে।

বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েও সেদিকে না গিয়ে উদ্যোক্তা হ‌ওয়ার কারণ জানতে চাইলে হাবিব বলেন, ‘অনার্স জীবনে বিসিএসে ফরেন ক্যাডার হ‌ওয়ার ইচ্ছা ছিল। অন্য কোন ক্যাডার না। তাছাড়া তখন পরিবার থেকে এক প্রকার চাপ‌ও ছিল। বলা হতো বিসিএস ক্যাডার হ‌ওয়ার কথা। 

পরবর্তীতে যখন আইবিএ-তে ভর্তি হ‌ই, তখন ঠিক করলাম উদ্যোক্তা হব। কেননা হালাল পথে টাকা উপার্জনের জন্য উদ্যোক্তা হ‌ওয়ার কোন বিকল্প নেই। আর উদ্যোক্তা হ‌ওয়ার স্বপ্ন আগে থেকেই ছিল। কিন্তু পারিপার্শ্বিক অবস্থায় তখন‌ও লক্ষ্য ঠিক করতে পারিনি। আইবিএ-তে এসেই লক্ষ্য স্থির করি উদ্যোক্তা হওয়ার।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি আগ্রহ ছিল। আইবিএ-তে আসার পর এটা নিয়ে বিশ্লেষণ করে দেখলাম কৃষি খাতটা টেকস‌ই হবে। ভবিষ্যতে‌ও এটা টিকে থাকবে।‌ এআই’র কারণে এই খাতটার পতন হবে এমন কোন সম্ভাবনা নাই। সেই চিন্তা থেকেই এদিকে আসা। যদিও একসময় বিসিএসের দিকে বেশ ঝোক ছিল।’ 

হাবিব বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে আমি যদি দুই-তিন বছর কৃষি খাতে পুরোপুরি সময় দেই; তাহলে এই ক্ষেত্রে ভালো কিছু করতে পারব।’ তিনি জানান, চাকরিতে অন্যের অধীনস্থ হয়ে কাজ করার আগ্রহ তেমন ছিল না। তাছাড়া চাকরির রুটিনমাফিক জীবন তার পছন্দ ছিল না। এটাও উদ্যোক্তা হ‌ওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ।

হাবিব জানান, এর আগে কৃষি ব্যাংকে সিনিয়র অফিসার পদে যোগদান করেছিলেন। সেখানে আড়াই মাসের মতো চাকরিও করেছে। পরে আর ভালো না লাগায় সেটি ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যাংক জব ছাড়ার কারণ হিসেবে পারিপার্শ্বিক অবস্থার উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘চাকরিতে থেকে আমার পক্ষে উদ্যোক্তা হ‌ওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব না। তাই চাকরিটা ছেড়ে দেই।’

কৃষির কোন খাতে কাজ করতে চান- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে কয়েকটি ছোট ছোট প্রজেক্ট নিয়ে পরীক্ষামূলক কাজ করছি। মূলত কৃষি পণ্য উৎপাদন ও সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে দেশ ও দেশের বাইরে রপ্তানির চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। কৃষির যেসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো আমদানি নির্ভর, সেগুলোতে আমদানি নির্ভরতা কাটিয়ে যেন রপ্তানি নির্ভর করতে পারি সেটা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে।’

ব্যক্তিজীবন থেকে জানা যায়, শুধু কৃষি উদ্যোক্তা নয়, অনলাইন জগতেও বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে হাবিবের। বর্তমানে তিনি ‘জয়েন ইংলিশ’ নামে নতুন একটি প্লাটফর্ম চালাচ্ছেন; যার ফলোয়ার এক লাখের বেশি। এখানে মূলত ফ্রি হ্যান্ড রাইটিং কোর্স করানো হয় এবং এই বিষয়ে একটি বইও প্রকাশিত হয়েছে- জানান হাবিব।

তার ভাষ্য, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থেকে আসা আয় দিয়েই তিনি কৃষি গবেষণা এবং কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। বর্তমানে তার কৃষিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির নাম ‘রুপাই অ্যাগ্রো’। আগামী মাস থেকে এখানেই পুরোদমে কাজ করবেন, জানালেন হাবিব।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement