মা–মেয়ে হত্যা: ‘গলায় পোড়া দাগ’ সূত্রে আয়েশা যেভাবে গ্রেপ্তার

মা–মেয়ে হত্যা: ‘গলায় পোড়া দাগ’ সূত্রে আয়েশা যেভাবে গ্রেপ্তার ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৭:২০, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজধানীর মোহাম্মদপুরে মা-মেয়েকে হত্যার ভয়াবহ ঘটনায় গৃহকর্মী আয়েশা ও তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মাত্র দুই হাজার টাকা চুরির ঘটনা থেকেই এই দ্বৈত হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত।

গ্রেপ্তারের পর বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলমের আদালত আয়েশার ছয় দিনের এবং রাব্বির তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন্স) এস এন মো. নজরুল ইসলাম জানান, শুরু থেকেই আয়েশার ওপর সন্দেহ ছিল। কিন্তু তাকে শনাক্ত করা ছিল কঠিন কাজ। কারণ, গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করলেও তার কোনো পরিচয়পত্র, মোবাইল নম্বর, ছবি বা ব্যক্তিগত তথ্য বাসায় সংরক্ষিত ছিল না। বোরকা পরে চলাফেরা করার কারণে সিসিটিভিতেও তার পরিষ্কার কোনো দৃশ্য পাওয়া যায়নি।

ডিজিটাল ক্লু না থাকায় তদন্তকারীরা প্রচলিত উপায়ে অনুসন্ধান শুরু করেন। নিহত লায়লা আফরোজার স্বামীর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তিনটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য সামনে আসে—তার গলার পোড়া দাগ, জেনেভা ক্যাম্পে বসবাসের ইতিহাস এবং গৃহকর্মীর পরিচয়ে পূর্বে চুরির অভিযোগ। এ সূত্র ধরে পুলিশ পুরোনো অভিযোগপত্র ঘেঁটে হুমায়ুন রোডের আরেক পরিবারের দেওয়া একটি মোবাইল নম্বর শনাক্ত করে। কল রেকর্ড বিশ্লেষণে দেখা যায়, নম্বরটি রাব্বি নামে এক ব্যক্তি ব্যবহার করেন এবং তিনিই আয়েশার স্বামী।

হেমায়েতপুরে তাদের আগের ঠিকানায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ দেখতে পায় বাসাটি তালাবদ্ধ। এরপর রাব্বির পরিবারের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আশুলিয়া, বরিশাল ও পটুয়াখালীতেও অভিযান চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামের এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে আয়েশা ও রাব্বিকে আটক করা হয়। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বাসা থেকে চুরি হওয়া একটি ল্যাপটপও।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা দুই খুনের দায় স্বীকার করেছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিন বাসা থেকে দুই হাজার টাকা চুরি করেন তিনি। পরের দিন টাকা নিয়ে গৃহকর্ত্রীর সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়। চতুর্থ দিন বাসায় যাওয়ার আগে তিনি সুইচ গিয়ার চাকু গোপন করে নেন। টাকা চুরির বিষয়ে তর্কের সময় লায়লা আফরোজা স্বামীকে ফোন করতে গেলে আয়েশা পেছন থেকে ছুরি মারে। এরপর ধস্তাধস্তির মধ্যে তিনি একাধিক ছুরিকাঘাতে লায়লাকে হত্যা করেন।

মায়ের চিৎকার শুনে ঘুম থেকে ওঠা নাফিসা এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে কল দিতে চাইলে আয়েশা প্রধান তার কেটে ফেলে। হত্যার পর আয়েশা রক্তমাখা কাপড় বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে বের হয়ে যায়। ব্যাগে ল্যাপটপ ও মোবাইল নিয়ে পালানোর সময় সিংগাইর ব্রিজ থেকে মোবাইল ও পোশাক নদীতে ফেলে দেন।

পুলিশ জানায়, হত্যার পর পালাতে আয়েশাকে সহায়তা করায় তার স্বামী রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সোমবার (১০ ডিসেম্বর) মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে লায়লা ফিরোজ (৪৮) এবং তার মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজ (১৫)-এর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই রাতেই লায়লার স্বামী স্কুলশিক্ষক আ জ ম আজিজুল ইসলাম গৃহকর্মী আয়েশাকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement