বেঁচে নেই গর্তে পড়া শিশু সাজিদ

বেঁচে নেই গর্তে পড়া শিশু সাজিদ ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ২৩:৪৫, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

রাজশাহীর তানোরে নলকূপের অরক্ষিত গর্তে পড়ে যাওয়া শিশু সাজিদ শেষ পর্যন্ত প্রাণে বাঁচেনি। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা আনুষ্ঠানিকভাবে তার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে যখন উদ্ধারকর্মীরা শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন, তখনই তার কোনও সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়নি। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরা জানান, শিশুটি হাসপাতালে আসার আগেই মারা গেছে।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (অপারেশন) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী জানান, প্রায় দীর্ঘ সময়ের উদ্ধার অভিযান শেষে রাত ৯টার দিকে শিশুটিকে গর্তের ভেতর থেকে তোলা হয়। বুধবার দুপুরে রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের কোয়েলহাট গ্রামে গভীর নলকূপের ওই গর্তে পড়ে যায় দুই বছরের সাজিদ।

ঘটনার দিন সাজিদ তার মা ও ভাইকে নিয়ে বাড়ির পাশের একটি জমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। জমিটিতে খড় বিছানো থাকায় নিচে বিপজ্জনক একটি গর্ত রয়েছে—এ কথা কেউই জানতেন না। হাঁটার এক পর্যায়ে হঠাৎ শিশুটি নিচে পড়ে যায়। পেছন থেকে ‘মা মা’ বলে চিৎকার শুনে তার মা ফিরে তাকান এবং বুঝতে পারেন যে সন্তানটি খড়ের নিচে থাকা গভীর গর্তে পড়ে গেছে। খড় সরাতেই সামনে আসে ভয়ংকর সেই মৃত্যুকূপ।

স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, গত বছর এলাকার এক ব্যক্তি এখানে গভীর নলকূপ স্থাপনের চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু ১২০ ফুট গভীরেও পানি না পাওয়ায় কাজ শেষ করা হয়নি। পাইপটি সেভাবেই ফেলে রাখা হয় খোলা মুখে। বর্ষাকালে মাটি ধসে গর্তটি আরও বড় হয়। কোনো সুরক্ষা বা সতর্কতা না থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

শিশুটিকে উদ্ধারের ঘটনা দেখতে এলাকাবাসী হাজারো মানুষ ভিড় করেন। গর্তের পাশে অবস্থান নিয়ে সারারাত জেগে থাকেন সাজিদের মা। সন্তানের বাঁচার আশায় চলতে থাকে কান্না, প্রার্থনা আর অশেষ অপেক্ষা। শুরুতে গর্তের ভেতর থেকে সামান্য শব্দ পেলেও সময় বাড়ার সাথে সাথে নিঃশব্দ হয়ে যায় ভেতর। যা উদ্ধার অভিযানে নিয়োজিত টিমকে আরও উদ্বিগ্ন করে তোলে।

ফায়ার সার্ভিস নিয়তই গর্তের ভেতরে অক্সিজেন সরবরাহ করছিল। মেডিকেল টিম, পুলিশ ও প্রশাসনের সদস্যদের পাশাপাশি স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকরাও ঘটনাস্থলে তৎপর ছিলেন।

এর আগে সন্ধ্যায় লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম জানিয়েছিলেন, শিশুটির গর্তে পড়ে যাওয়ার গভীরতা ও সময় বিবেচনায় বেঁচে থাকার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। তবুও জীবিত বা মৃত—যে অবস্থাতেই পাওয়া যাক না কেন, সাজিদকে উদ্ধার করার আগ পর্যন্ত অভিযান চলবে—এ প্রতিশ্রুতিই দিয়েছিলেন তিনি।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement