কমলো মিনিকেটের দাম, মুরগিসহ সবজির বাজারে আগুন

কমলো মিনিকেটের দাম, মুরগিসহ সবজির বাজারে আগুন

TheBusinessDaily

Published : ১২:৫৩, ৯ মে ২০২৫

দেশের বিভিন্ন জেলায় বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। ফলে বাজারে আসছে নতুন চাল। ফলে দাম কমেছে সরু তথা মিনিকেট চালের। গত দুই সপ্তাহে ধরনভেদে এই চালের দাম কেজিতে ১০-১২ টাকা কমেছে।

অন্যদিকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় সবজির দাম চড়া। পাশাপাশি বাড়ছে মুরগির দামও। এতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডায়মন্ড, মঞ্জুর, রশিদ প্রভৃতি ব্র্যান্ডের নতুন মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৭৫-৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দুই সপ্তাহ আগেও এই চালের কেজি ৮৮-৯০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে অন্যান্য চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।

রোজার ঈদের পর বাড়তে শুরু করে সবজির দাম। কমদামি সবজি হিসেবে পরিচিত প্রতি কেজি পেঁপে এখন ৮০ টাকা। ব্যবসায়ীদের দাবি সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বেড়েছে।

শুক্রবার (৯ মে) রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।

সকালে পল্লবীর মুসলিম বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দোকানে শাক-সবজি সাজাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। ক্রেতার সংখ্যা কম। পেঁপের দাম কত জানতে চাইলে সবজি বিক্রেতা হাসান বলেন, মাত্র ৮০ টাকা। এখন পেঁপের সরবরাহ খুব কম। পাইকারি বাজারেও দাম বেশি। বর্ষা শুরু হলে দাম কিছুটা কমে যাবে।

আরেক বিক্রেতা বলেন, দাম বাড়ায় পেঁপের ক্রেতাও কমে গেছে। এখন পেঁপের মৌসুম না। ঢাকায় পেঁপে আসছে কম।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ৭০-৮০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। প্রতিকেজি পটোল ৭০-৮০ টাকা, কাঁকরোল ৯০-১০০ টাকা, টমেটো মানভেদে ৪০-৫০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, দেশি শসা ৮০ টাকা, চালকুমড়া প্রতি পিস ৫০-৬০ টাকা, লম্বা লাউ প্রতি পিস ৭০-৯০ টাকা, ঝিঙা প্রতিকেজি ৮০-১০০ টাকা, করলা প্রতিকেজি ৮০ টাকা, কচুরমুখি প্রতিকেজি ১০০-১২০ টাকা, প্রতিকেজি মিষ্টি কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁচকলার হালি ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, সজনে ডাটা কেজি ১৫০-১৬০ টাকা। প্রতিকেজি চিচিঙা ৬০-৮০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে দেশি পেঁয়াজ মানভেদে প্রতি কেজি ৫৫-৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আলু ২৫-৩০ টাকা, দেশি নতুন রসুন ১৪০-১৬০ টাকা, আমদানি করা রসুন ২২০-২৪০ টাকা, চিনি ১২০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০-১১৫ টাকা, দেশি চিকন মসুর ডাল ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কিছুটা বেড়েছে। প্রতি ডজন ডিম ৫ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মিরপুর ১১ নম্বর কাঁচাবাজারে ডিম ব্যবসায়ী সবুজ আহমেদ বলেন, দাম একটু বেশি, আমরা বেশি দামে ডিম কিনছি এখন।

ডিম কিনতে আসা গৃহিণী জারা আমিন বলেন, অনেক দিন ধরে শুনছি ডিম বাজারে আসবে না। বন্ধ হয়ে যাবে। দুই সপ্তাহ আগে ডিম কিনেছি। তখন ১৩০ টাকা ডজন পড়েছে। আজ কিনলাম ১৪৫ টাকায়।

মাহফুজ নামের আরেক ক্রেতা বলেন, নানা অজুহাতে ব্যবসায়ীরা পণ্যের দাম বেশি রাখছে। ক্রেতারা অসহায়। দুনিয়ার যেখানে যুদ্ধ হোক বাংলাদেশ পণ্যের দাম বাড়ে। ভারত-পাকিস্তানে যুদ্ধ লেগে গেলেও এর ব্যতিক্রম হবে না।

এদিকে মুরগির বাজারেও দেখা দিয়েছে নতুন চাপ। ব্রয়লার মুরগি কেজিপ্রতি ১০ টাকা বেড়ে এখন ১৭০-১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সোনালী মুরগি ৩২০ টাকা, কক ৩৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফিডের দাম বৃদ্ধি, খামারে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং পরিবহণ ব্যয় বাড়ায় এই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে অনেকে মনে করছেন, এই সুযোগে এক শ্রেণির মজুতদার ইচ্ছাকৃতভাবে দাম বাড়িয়ে চলছে।

গরু ও খাসির মাংসের দাম আগের মতোই রয়েছে। গরুর মাংস ৭৫০-৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছাগলের মাংস ১১০০ টাকা কেজি।

মাছের বাজার তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। রুই ৩৫০-৪২০ টাকা, কাতল ৩৮০-৪৫০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, কৈ ২০০-২৫০ টাকা, কোরাল ৭৫০ টাকা, পাঙাশ ১৮০-২৩৫ টাকা এবং তেলাপিয়া ১৫০-২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজার করতে আসা অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। খিলক্ষেতে বাজার করতে আসা আমিরুল বলেন, ‘সবজির দাম শুনলেই ভয় লাগে। মুরগি কিনতে গেলেও একই অবস্থা। আওয়ামী আমলের মতো দিনে দিনে বাজারে প্রত্যেকটি দ্রব্যর মূল বাড়া শুরু করেছে। মনে হচ্ছে- এখন ডাল-ভাত খেয়েই দিন চলাতে হবে।’

সাধারণ চাকুরি করা দিনেশ বলেন, ‘মাসের শুরুতেই বাজারে গিয়ে পুরো বেতন ফুরিয়ে যায়। সরকার এখনই কিছু না করলে সামনে মানুষ আর বাজারে যেতে পারবে না।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, বাজার ব্যবস্থাপনায় নজরদারির ঘাটতি এবং সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতাই এই পরিস্থিতির মূল কারণ।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement