রিপন মিয়াকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন মীর লোকমান

রিপন মিয়াকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করলেন মীর লোকমান ছবি: সংগৃহীত

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ১৭:৩৪, ১৫ অক্টোবর ২০২৫

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিগত কয়েকদিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর রিপন মিয়া। এ

কদিকে টেলিভিশনের একটি প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মা-বাবাকে অবহেলার অভিযোগ, অন্যদিকে ছড়িয়ে পড়েছে এক আবেগঘন ভিডিও—এই দুই বিপরীত দিকের গল্প যেন মুহূর্তেই বদলে দিয়েছে বিতর্কের পুরো সুর। এমন প্রেক্ষাপটে এবার এই ঘটনাকে ঘিরে নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন বাংলাদেশের জনপ্রিয় মূকাভিনেতা মীর লোকমান।

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) মীর লোকমান তার ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসটিতে তিনি রিপন মিয়াকে নিয়ে নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন, যা আরটিভি নিউজের পাঠকদের জন্য নিচে তুলে ধরা হলো—

‘রিপন মিয়ারে নিয়া কিছু কথা...’

গত কয়েকদিন ধরে তাকে নিয়ে গণমাধ্যমে হইচই লেগে গেছে। প্রায় সব জাতীয় ও মূলধারার সংবাদমাধ্যমই রিপন মিয়াকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তার বলা একেকটি কথা যেন সামাজিক মাধ্যমে বাণীসম হয়ে ঘুরছে। প্রথম আলোতে প্রকাশিত খবর দেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুমিত আল রশিদ পর্যন্ত আমাকে ফোন করে বলেছিলেন— “লোকমান, গেছে, সব গেছে! এই মানুষটারে নিয়ে এমন আয়োজন পর্যন্ত?”

এবার আসি মূল কথায়।
সত্যি বলতে, এরকম একজন মানুষ আমি খুব কমই দেখেছি। ২০২০ সালের দিকে, করোনার সময়ে, রিপন মিয়া তখন খুব পরিচিত কেউ ছিলেন না। তখন সবাই তাকে চিনত “রিপন ভিডিও” নামে। তার সরল উচ্চারণে ছন্দ মেলানো কথাবার্তা দেখে আমি যোগাযোগ করি এবং তাকে ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানাই।

ঢাকায় আসার পর সে আমার বাসাতেই থাকত। তার যাতায়াত, খাওয়া-দাওয়ার সমস্ত খরচ আমিই দিতাম। আমার মূকাভিনয় ক্লাসে অংশ নেওয়ার সুযোগও দিয়েছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল— গ্রামের এক সাধারণ ছেলে হিসেবে হঠাৎ ভাইরাল হওয়া রিপনকে যেন ইতিবাচকভাবে গড়ে তোলা যায়। সে যেন বুঝে শুনে, শেখে এবং মিডিয়ার কাজের ধারার সঙ্গে পরিচিত হয়।

প্রথম দুই দিন সে হাতিরপুলে আমার ক্লাসে নিয়মিত আসে। তৃতীয় দিনে আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে শ্যুট করতে যাই। সেখানে ক্লাসের অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে গ্রুপ ভিডিও ধারণ হচ্ছিল। সবাই তাকে সহযোগিতা করছিল, ক্যাম্পাস ঘুরে দেখাচ্ছিল।

কয়েকদিন পর সে নিজ বাড়ি ফিরে যায়, আর তারপর থেকেই শুরু হয় সমস্যার সূত্রপাত।
আমাদের ক্লাসের মেয়েদের ছবি ব্যবহার করে সে ফেসবুকে একের পর এক বিভ্রান্তিকর পোস্ট দিতে থাকে। লিখতে থাকে— “আমার গার্লফ্রেন্ড”, “আমি এম রোকেয়া হলে যাই”, “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেয়েরা আমার পিছে পিছে ঘুরে”— এমন আজগুবি সব কথা। এই পোস্ট দেখে ক্লাসের এক মেয়ে মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

আমি তাকে ফোন করে বহুবার অনুরোধ করি যেন এসব ছবি ও লেখা মুছে দেয়। বলি— “তুমি আমার ছাত্র, আমি তোমাকে শেখানোর চেষ্টা করেছি। এটা ঠিক না।” কিন্তু সে ফোন ধরা বন্ধ করে দেয়। বরং আরও অশালীন পোস্ট দিতে থাকে।

শেষ পর্যন্ত আমি বাধ্য হয়ে ড. মুমিত স্যারের সাহায্য চাই। তিনি আমাকে বকাঝকা করেন এবং বলেন, “না বুঝে কেন এমন একজনকে ঢাকায় আনলে?”
পরবর্তীতে প্রথম আলোর নেত্রকোনা প্রতিনিধির সহযোগিতায় পুলিশ তাকে থানায় ডেকে নেয়। সেখানে তাকে বাধ্য করা হয় সব পোস্ট ও ছবি ডিলিট করতে। পুলিশ তাকে সারাদিন থানায় রেখে মুচলেকা নেয় এবং সন্ধ্যায় ছেড়ে দেয়। প্রায় এক সপ্তাহ পর তার মোবাইল ফেরত দেওয়া হয়।

এর পর থেকেই তাকে বিভিন্ন বড় ইউটিউবারদের ভিডিওতে দেখা যায়। এক সময় সে বেশ পরিচিত হয়ে যায়— একেবারে ভাইরাল ফিগারে পরিণত হয়। অথচ সেই রিপন মিয়াকেই এখন আমরা দেখি মিডিয়া তাকে “মহান মানুষ” বানিয়ে ফেলেছে, তার কথাগুলো যেন দার্শনিক ভাবনায় ছুঁয়ে যাচ্ছে!

কিন্তু এখন আবার দেখা যাচ্ছে, পরিস্থিতি উল্টো দিকে যাচ্ছে। কেউ বলছে, সে নাকি মা-বাবাকে দেখে না, কেউ বলছে স্ত্রী-সন্তানকে অস্বীকার করে।

আমি তার মঙ্গল কামনা করি। আশা করি, সে যেন সুস্থ, স্থিতিশীল ও দায়িত্বশীল জীবনে ফিরে আসে।

বিডি/এএন

শেয়ার করুনঃ
Advertisement