ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর যুগান্তকারী সংস্কার: ২০২৫ সালের দ্বিতীয় সংশোধনী

Published : ১২:৪৫, ১২ আগস্ট ২০২৫
২০২৫ সালের দ্বিতীয় সংশোধনীordinance-এর মাধ্যমে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এ ব্যাপক সংস্কার আনা হয়েছে। এর মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেটদের জরিমানার ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারা ৩২ অনুযায়ী, প্রথম শ্রেণির জরিমানার সীমা ১০,০০০ টাকা থেকে ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৫,০০০ থেকে ৩,০০,০০০ এবং তৃতীয় শ্রেণিতে ২,০০০ থেকে ২,০০,০০০ টাকা নির্ধারিত হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তির অধিকার সুরক্ষায় নতুন ধারা ৪৬এ সংযোজিত হয়েছে, যা গ্রেপ্তারকারীদের নাম ও পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করেছে। এছাড়া গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টার মধ্যে পরিবারের বা নিকটজনদের অবগত করার নিয়ম, আঘাত বা অসুস্থতা ঘটলে চিকিৎসকের সনদ গ্রহণ এবং আইনজীবীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ নিশ্চিত করা হয়েছে। মেমোরেন্ডাম অব অ্যারেস্ট ধারা ৪৬এ অনুসারে গ্রেপ্তারের সময় চেকলিস্টসহ ফর্ম তৈরি ও ম্যাজিস্ট্রেটের তদারকি বাধ্যতামূলক হয়েছে।
গ্রেপ্তারের তথ্য সংরক্ষণ ও প্রকাশের ব্যবস্থাও জোরদার হয়েছে (ধারা ৫৪এ, ৪৬বি, ৪৬সি)। টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রীর তালিকা পৃথকভাবে প্রস্তুত করতে হবে এবং পরিবারের কপিও প্রদান করতে হবে (ধারা ৫১)। ধারা ৫৪ অনুযায়ী বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারে যুক্তিসঙ্গত কারণ দেখানো বাধ্যতামূলক এবং নিবারণমূলক আটক নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
আদালতের তদারকি (ধারা ৬৭এ) নিশ্চিত করেছে যে গ্রেপ্তার সংক্রান্ত বিধি প্রতিপালন হচ্ছে কিনা পর্যবেক্ষণ করা হবে, লঙ্ঘন হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ রিমান্ডের ক্ষেত্রে এক মামলায় সর্বোচ্চ সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ দিন (ধারা ১৬৭), যেখানে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বাধ্যবাধকতাও রাখা হয়েছে।
তদন্তের সময়সীমা সাধারণত ৬০ কর্মদিবস নির্ধারণ করা হয়েছে (ধারা ১৭৩বি), যা ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতিতে বাড়ানো যেতে পারে। বিলম্ব হলে কারণ ব্যাখ্যা করতে হবে এবং প্রয়োজনে তদন্তকারী পরিবর্তন বা শাস্তি দেওয়া হবে। সংক্ষিপ্ত বিচার (ধারা ২৬৪এ) মামলার মূল্যসীমা ১০,০০০ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫,০০,০০০ টাকা হয়েছে, যেখানে চার্জ থেকে রায় পর্যন্ত একই বৈঠকে সম্পন্ন করা যাবে।
অনুপস্থিত আসামির বিচারেও পরিবর্তন আনা হয়েছে (ধারা ৩৩৯বি), যেখানে ক্রোকি ও হুলিয়া পরোয়ানা বাধ্যতামূলক নয় এবং নোটিশ প্রকাশের নিয়ম সংশোধন করা হয়েছে। দণ্ডবিধি ১৪৩ ধারা অনুযায়ী আপসযোগ্য মামলা ও আদালত ও জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জামিন ক্ষেত্রে শর্ত প্রদান (ধারা ৪৯৮) ও ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি (ধারা ৫৪০এ) দেওয়া হয়েছে। সাক্ষীর খরচ ও সুরক্ষায় (ধারা ৫৪৪) সরকারি আদেশের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গুরুতর জখম মামলায় জামিন কঠিন করার নিয়ম (ধারা ৩২৫) রাখা হয়েছে। মিথ্যা মামলার শাস্তি বৃদ্ধি (ধারা ২৫০) করা হয়েছে, সর্বোচ্চ অর্থদণ্ড ৩,০০০ থেকে ১,০০,০০০ টাকা এবং ক্ষতিপূরণ ১,০০০ থেকে ৫০,০০০ টাকা পর্যন্ত। ডিজিটাল সমন ও অনলাইন বেল বন্ডের ব্যবস্থাও চালু হয়েছে। বেত্রাঘাত সাজা বিলুপ্ত এবং আপিলঅযোগ্য অর্থদণ্ড সীমা ৫০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৫,০০০ টাকা করা হয়েছে।