ইসরায়েলের হতাহতের সংখ্যা প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি: ইরান

ইসরায়েলের হতাহতের সংখ্যা প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি: ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

Published : ১৭:০৫, ১২ জুলাই ২০২৫

১২ দিনের যুদ্ধে ইরানের হামলায় ইসরায়েলের হতাহতের প্রকৃত সংখ্যা সরকারিভাবে প্রকাশিত তথ্যের চেয়ে অনেক বেশি বলে সম্প্রতি দাবি করেছেন ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ।

তিনি বলেন, ইসরায়েলের ৩৫০০ জন আহত হওয়ার তথ্য থেকে বোঝা যায়, অন্তত ৫০০ জন নিহত হয়েছে।

ইরান ও ইসরায়েল-মার্কিন জোটের মধ্যকার ১২ দিনের যুদ্ধ নিয়ে ইরানের আইআরআইবি-১ টিভি চ্যানেলকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মোহাম্মদ বাকের কালিবাফ এ দাবি করেন। 

তার মতে, ইসরায়েলের নিরাপত্তা গবেষণা কেন্দ্র জানিয়েছে, তাদের আহতের সংখ্যা ৩৫২০ জন। এই হিসাব অনুযায়ী, কমপক্ষে ৫০০ জন নিহত হওয়ার কথা। প্রকৃতপক্ষে ইসরায়েলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সরকারিভাবে জানানো সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি ছিল।  

যুদ্ধবিরতির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে ইরানের পার্লামেন্ট স্পিকার জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সাম্প্রতিক সামরিক আগ্রাসন বন্ধ হয়েছে মূলত তাদের ব্যর্থতার কারণে, কোনোরকম নমনীয় মনোভাবের কারণে নয়।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, স্থল ও আকাশে ইরানের নিয়ন্ত্রণই ছিল ইসরায়েলের ব্যর্থতার অন্যতম কারণ। তার ভাষায়, আমরা ইসরায়েলের সামরিক ও প্রতিরক্ষা কেন্দ্রগুলো অকার্যকর করে দিয়েছি।

ইরানের স্পিকার জানান, যুদ্ধের শেষদিকে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার নির্ভুলতার হার ছিল ৯০% এরও বেশি, যার ফলে ইসরায়েলের প্রধান সামরিক ও বিমান প্রতিরক্ষা স্থাপনাগুলো অচল হয়ে পড়ে।

কালিবাফ দাবি করেন, লক্ষ্যবস্তুর ওপর ইরানের ছিল পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ, যার ফলে ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। ইরান কেবল ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই লড়েনি, বরং মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো ও পশ্চিমা শক্তির বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়েছে।

এ সময় তিনি যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের বিরুদ্ধে হামলার জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যুদ্ধকালীন আলোচনার ভেতরে হামলা চালানো যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমুখী নীতিরই বহিঃপ্রকাশ।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনার প্রসঙ্গে কালিবাফ বলেন, যখন আলোচনা চলছিল তখনই আমেরিকা ইরানে হামলা চালিয়ে তাদের অসৎ উদ্দেশ্য প্রকাশ করেছে।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, যদি আমেরিকা সত্যিই কূটনৈতিক সমাধান চায়, তাহলে তাদের প্রথমেই নিজেদের আগ্রাসন ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের ব্যাখ্যা দিতে হবে।

তার ভাষায়, “আলোচনার মধ্যে আমাদের ওপর হামলা চালাল কেন- এই প্রশ্নের উত্তর আমেরিকাকে দিতেই হবে।”

কালিবাফ যুক্তরাষ্ট্রকে ‘আবর্জনার ভাগাড়’ হিসেবে অভিহিত করেন, যা পশ্চিমাদের নোংরা কাজ সম্পাদনের মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তিনি বলেন, যদি আমেরিকা সত্যিই সৎ হয়, তাহলে তারা সাম্প্রতিক হামলায় যে ক্ষতি করেছে, তার পূর্ণ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

ইরানের স্পিকার বলেন, ইরান এই লড়াইয়ে শুধুমাত্র রাষ্ট্রীয় নয়, ধর্মীয় সমর্থনও পেয়েছে। শিয়া আলেমদের পাশাপাশি সুন্নি পণ্ডিতরাও একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, যাকে তিনি নবায়িত তামাক বর্জন আন্দোলনের (তানবাকু আন্দোলন) সাথে তুলনা করেছেন।

গত ১৩ জুন ইসরায়েল প্রকাশ্য ও উস্কানিমূলক আগ্রাসনের মাধ্যমে ইরানে হামলা চালায়, যাতে দেশটির অনেক উচ্চপর্যায়ের সামরিক কমান্ডার ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন। 

২২ জুন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে ইসরায়েলের এই যুদ্ধের সঙ্গে যোগ দেয় এবং জাতিসংঘ সনদ ও পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) লঙ্ঘন করে ইরানের ৩টি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

ইরানে আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে একঘরে হয়ে পড়া ইসরায়েল ২৪ জুন  মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মাধ্যমে একতরফাভাবে হামলা বন্ধের ঘোষণা দেন।

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement