বাংলাদেশেই বছরে ১৫০০ কোটি টাকার চামড়া আমদানি

Published : ১২:৪৯, ২১ জুন ২০২৫
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দেশে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আমদানি করা হয়, যা এর আগের ২০২২–২৩ অর্থবছরে ছিল ১ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। আর চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের অক্টোবর–মার্চ ছয় মাসে আমদানি হয়েছে প্রায় ৮ কোটি ডলার বা ৯৭৬ কোটি টাকার চামড়াপণ্য। এসব আমদানির মধ্যে রয়েছে চামড়া ও চামড়াজাত সামগ্রী, ভ্রমণব্যাগ, হাতব্যাগ, পশুর নাড়িভুঁড়ি দিয়ে তৈরি পণ্য ও ঘোড়ার সাজসজ্জার সামগ্রী ইত্যাদি।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) তথ্য অনুযায়ী, দেশের অভ্যন্তরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রায় তিন বিলিয়ন ডলার বা সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকার বাজার রয়েছে (প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে)। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত স্থানীয় বাজারে ৫ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বর্তমানে দেশের এ খাতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি ছোট ও মাঝারি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর চামড়া প্রক্রিয়াকরণের সঙ্গে যুক্ত আছে ২৫০টির বেশি ট্যানারি। চামড়াজাত পণ্য উৎপাদনকারী বড় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯০টির মতো। এ খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৮–১০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
মুসলিম অধ্যুষিত দেশ হওয়ায় এখানে প্রতিবছর কোরবানির ঈদে কমবেশি এক কোটি পশু কোরবানি হয়। এ বছর দেশব্যাপী কোরবানি হয়েছে ৯১ লাখের বেশি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৪ লাখ ৯ হাজার। তার আগের বছরও এক কোটির বেশি পশু কোরবানি হয়েছিল। অর্থাৎ শুধু ঈদের তিন দিনেই এক কোটি চামড়া পাওয়া যায়। এর ওপর সারা বছর তো পশু জবাই হয়।
এত বেশি পরিমাণ চামড়ার জোগান থাকা সত্ত্বেও ইউরোপ–আমেরিকার বাজারে রপ্তানি করা যাচ্ছে না। ইউরোপভিত্তিক লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপের (এলডব্লিউজি) সনদ না থাকায় উন্নত দেশের বাজার সংকুচিত হয়ে এসেছে। তাই বাধ্য হয়ে কম মূল্যে চীনের কাছে চামড়া রপ্তানি করতে হচ্ছে। আর সেই চামড়া চীনারা ইতালিসহ ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার কোরিয়ার মতো বড় বড় বাজারে রপ্তানি করে সুবিধা নেয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) রপ্তানির তথ্যমতে, গত ২০২৩–২৪ অর্থবছরে চামড়া রপ্তানি হয়েছিল ১৪ কোটি ২০ লাখ ডলারের, যা এর আগের ২০২২–২৩ অর্থবছরে ছিল ১২ কোটি ৩০ লাখ ডলার। যদিও দুই অর্থবছরেই সার্বিক চামড়াপণ্যের রপ্তানি ছিল এক বিলিয়ন ডলারের বেশি।
চামড়ার রপ্তানি বৃদ্ধি ও স্থানীয় বাজারে কাঁচা চামড়ার মূল্য বাড়াতে করণীয় কী জানতে চাইলে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্টের (র্যাপিড) নির্বাহী পরিচালক মো. আবু ইউসুফ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজার বাড়ানো না গেলে চামড়ার চাহিদা বাড়বে না। এ জন্য কমপ্লায়েন্সের বিকল্প নেই। তাই এখন একটি বিগ পুশ (বড় ধাক্কা) প্রয়োজন। বিসিক থেকে বের হয় চামড়া উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। চামড়া খাতে যোগ্য অভিভাবক দরকার।’
সিইটিপিসহ সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বিসিকের চেয়ারম্যান মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা সিইটিপির সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নিচ্ছি। নতুন করে সাত–আটটি প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব ইটিপি স্থাপনের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। এতে তারা ১০ হাজার কিউবিক মিটার বর্জ্য নিজেরাই পরিশোধন করতে পারবে। আর আমরা বিদ্যমান সিইটিপির সক্ষমতা ১৫ হাজার কিউবেক মিটার থেকে ২৫ হাজার মিটার করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে বাজেট চেয়েছি। এটা করা গেলে সক্ষমতা দাঁড়াবে ৩৫ হাজার কিউবিক মিটারে, যা দিয়ে পিক সময়ে চাহিদা মেটানো যাবে। তা ছাড়া ইউরোপীয় অর্থায়নে ইতালি একটি জরিপ করছে। এক বছরের মধ্যে তারা প্রতিবেদন দেবে। বিদ্যমান সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা নতুন সিইটিপি করার বিষয়ে তাদের প্রতিবেদনের আলোকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
সিইটিপির বর্তমান পরিস্থিতির জন্য কারও গাফিলতি কিংবা দায় আছে কি না, তা দেখার জন্য একটি কমিটি তদন্ত করছে বলেও জানান সিইটিপির তদারকি সংস্থার এ কর্মকর্তা।
দেশে নিজস্ব কাঁচামাল নির্ভর রপ্তানিপণ্যের মধ্যে চামড়া অন্যতম। এটি দেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানিপণ্য, যা এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে। পরিবেশ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মান নিয়ে প্রশ্ন থাকায় আন্তর্জাতিক সনদ মিলছে না। গত এক দশকে চামড়ার দাম না বেড়ে উল্টো কমেছে বলা যায়। বিদেশের বাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। শুধু কি তাই? কাঁচা চামড়ার জন্য প্রসিদ্ধ এই দেশে এখন বিদেশ থেকে চামড়া আমদানি করতে হচ্ছে। এ জন্য বছরে ব্যয় হচ্ছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।