৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা

৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা

বিজনেস ডেইলি ডেস্ক

Published : ০১:৫২, ১১ আগস্ট ২০২৫

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধন এবং বাণিজ্যিক মোটরযানের ‘ইকোনমিক লাইফ’ ৩০ বছর করাসহ ৮ দফা দাবিতে ঘোষিত ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগামীকাল মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট পালনের কথা থাকলেও রোববার সরকারের সঙ্গে আলোচনার পর এ সিদ্ধান্ত নেয় পরিবহনের মালিক-শ্রমিক নেতারা।


রোববার বিকালে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে বৈঠকে দাবিগুলো নিয়ে পরিবহন খাতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার পর সমাধানের প্রক্রিয়া শুরু করার আশ্বাস দেয় সরকার।

বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী, জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের সমন্বয়ক শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস বলেন, সরকারকে জিম্মি করে কোনো কিছু আদায় করা উচিত নয়। সরকারের সব সিদ্ধান্তের আইনানুগ প্রয়োগ হবে। আমাদের যুক্তিসংগত দাবিগুলো একাধিক মিটিং করে সরকার আমলে নিয়েছে। তাই আমরা ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলাম।

 

 

সড়ক পরিবহন ও সেতু মত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান বলেন, পরিবহনের মালিক–শ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনা করে দাবিগুলো যৌক্তিক পর্যায়ে বিবেচনা করা হবে। মালিকেরা আমাদের কথায় আশ্বস্ত হয়েছেন। ফলে ধর্মঘট প্রত্যাহার করেছেন তারা।

বৈঠকে পরিবহন মালিকদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, আমরা রাজনৈতিক সরকার না। আমাদের কোনো সংগঠনও নেই। আমরা আপনাদের প্রতিপক্ষ না। তবে সড়কে মেয়াদহীন গাড়িতে ভরা। এগুলো সড়ক থেকে সরাতে হবে। আপনাদের দাবিগুলো যাচাই করতে একমাস সময় লাগবে।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. শেখ মইনউদ্দিন, সড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল আলমসহ বাস-ট্রাকের বিভিন্ন পরিবহনের নেতারা।

এর আগে গত ২৭ জুলাই সংবাদ সম্মেলন করে ৮ দফা দাবিতে ৭২ ঘণ্টা সব ধরনের বাণিজ্যিক পরিবহন বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। আজ সোমবারের মধ্যে দাবিগুলো মানার আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে—সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারাসহ সুপারিশকৃত ধারাগুলো সংশোধন, বাণিজ্যিক মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ ২০ ও ২৫ বছর থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ বছর করা, সমস্যা সমাধান না হওয়া পর্যন্ত ২০ ও ২৫ বছরের পুরাতন গাড়ির বিরুদ্ধে বিআরটিএর অভিযান স্থগিত রাখা, বাজেটে আরোপিত দ্বিগুণ অগ্রিম আয়কর (প্রিজাম্পটিভ ইনকাম ট্যাক্স) কমিয়ে আগের মতো বহাল রাখা, রিকন্ডিশন বাণিজ্যিক যানবাহন আমদানির মেয়াদ ৫ বছর থেকে ১২ বছর করা, দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি থানায় আটক হলে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় দেওয়ার বিধান, মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন, মহাসড়কে তিন চাকার যানবাহন ও বিআরটিএ অনুমোদনবিহীন হালকা যানবাহনের পৃথক লেন ব্যবস্থা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও নবায়ন দ্রুত সরবরাহ এবং শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা দাবি বাস্তবায়ন।

এদিকে, পালিয়ে যাওয়া আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের অনুগত পরিবহণ মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নেতাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে পুরোনো কায়দায় দেশের মানুষদের জিম্মি করে দাবি আদায়ের ‘পরিবহন ধর্মঘট’ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এক বিবৃতিতে সংগঠনটির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানিয়ে বলেন, গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী পরিবহন সেক্টরে নেতৃত্বের পরিবর্তন হলেও তাদের চরিত্রের পরিবর্তন হয়নি।

তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে সড়কে ২০ বছরের পুরানো গাড়ি উচ্ছেদে পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বার বার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এখন পরিবহণ মালিক সমিতি ও শ্রমিক ফেডারেশনের নতুন নেতারা তাদের শক্তি জানান দিতে পুরোনো কায়দায় জাতিকে জিম্মি করে সড়ক আইন দুর্বল করা ও পুরোনো গাড়ির উচ্ছেদ আটকাতে চাইছে।

শেয়ার করুনঃ
Advertisement