‘আমার লক্ষ্য নেতৃত্ব নয়, অংশীদারিত্বের সংস্কৃতি গড়ে তোলা’ : ড. মোহাম্মদ নূরুজ্জামান

Published : ১৯:৩১, ৬ মে ২০২৫
১. আপনি একটি নতুন টার্ম ‘ই-কমার্স ইকোনমি’ ইউজ করছেন, এটা দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন?
ই-কমার্স ইকোনমি বলতে বোঝায় এমন একটি ডিজিটাল অর্থনীতি, যা অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা, ডিজিটাল পেমেন্ট, ডেলিভারি সেবা, উদ্যোক্তা উন্নয়ন, দক্ষতা উন্নয়ন ও ব্যবহার এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে একত্রে সংযুক্ত করে।
এটি কেবলমাত্র কেনাবেচার একটি মাধ্যম নয়—বরং এটি একটি সমন্বিত অর্থনৈতিক ইকোসিস্টেম, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, রাজস্ব বাড়ায়, রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি করে, এবং অর্থনীতিকে আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রযুক্তিনির্ভর করে তোলে।
বাংলাদেশে ই-কমার্স ইকোনমি গড়ে উঠলে—
মাইক্রো ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা জিডিপিতে অবদান রাখতে পারবে
নারী উদ্যোক্তার হার বাড়বে
প্রযুক্তিনির্ভর রাজস্ব আসবে
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে প্রবেশাধিকার সহজ হবে
অতএব, ই-কমার্সকে শুধু সেক্টর নয়, ‘নতুন অর্থনীতির রূপকার’ হিসেবে বিবেচনা করতে হবে।
২. বাংলাদেশে ই-কমার্স GDP-তে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারছে না কেন?
বাংলাদেশের ই-কমার্স খাত এখনও জিডিপি’র আনুষ্ঠানিক পরিসংখ্যানে সঠিকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে না, তার প্রধান কারণগুলো হলো:
১. বহু ব্যবসা এখনো ইনফর্মাল—Facebook based ফরম্যাটে চলছে, যেখানে ট্রেড লাইসেন্স, BIN, VAT নেই
২. লেনদেন মূলত ক্যাশ-অন-ডেলিভারি ভিত্তিক—ব্যাংকিং বা ডিজিটাল ট্র্যাক রেকর্ডে ঢুকে না
৩. সঠিক ব্যবসা ডেটার ঘাটতি—সরকার, e-CAB বা BBS-এর কাছে কোনো কেন্দ্রীয় ডেটাবেইস নেই
৪. নীতিগত স্পষ্টতা ও প্রণোদনার অভাব—ফলস্বরূপ উদ্যোক্তারা ফর্মালাইজ হতে আগ্রহ পান না
এই বাস্তবতা পাল্টাতে হলে—
Smart BDID চালু করা
ডিজিটাল পেমেন্টের গ্রহণযোগ্যতা ও প্রণোদনা বাড়ানো
e-CAB এর মাধ্যমে একটি জাতীয় e-commerce ডেটা ড্যাশবোর্ড গঠন করতে হবে
৩. BDID তো অলরেডি আছে। Smart BDID কেন প্রয়োজন?
Smart BDID (Business Digital Identity) একটি ইউনিক ডিজিটাল ব্যবসা পরিচিতি, যা একজন উদ্যোক্তার যাবতীয় তথ্য একক আইডিতে যুক্ত করবে। এর প্রয়োজনীয়তা:
একজন উদ্যোক্তা এখন ট্রেড লাইসেন্স, TIN, BIN, পেমেন্ট, কুরিয়ার, মার্কেটপ্লেস—সবখানেই আলাদা আলাদা রেজিস্ট্রেশন করতে বাধ্য হন
ফলে সময়, খরচ ও জটিলতা বাড়ে
পাশাপাশি সরকার কোনো নির্ভরযোগ্য ও একীভূত তথ্য পায় না
Smart BDID চালু হলে—
ব্যবসার রেজিস্ট্রেশন সহজ ও স্বয়ংক্রিয় হবে
উদ্যোক্তা সহজেই e-CAB, ব্যাংক ও সরকারিভাবে স্বীকৃতি পাবে
রেজিস্টার্ড উদ্যোক্তারা প্রণোদনা, ট্রেনিং, লোন ও ভ্যাট ইনসেনটিভ পাবে
সরকার ও নীতিনির্ধারকরা ডেটা-চালিত সিদ্ধান্ত নিতে পারবে
সংক্ষেপে, এটি হবে ‘এক ব্যবসা, এক আইডি’ নীতির বাস্তবায়ন।
৪. ‘গ্লোবাল বাংলাদেশ’ বলতে আপনি কী বোঝাতে চাচ্ছেন?
‘গ্লোবাল বাংলাদেশ’ একটি দৃষ্টিভঙ্গি—যেখানে বাংলাদেশি পণ্য ও সেবা আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছায়, এবং বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিশ্ব প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
ই-কমার্স হলো এই ভিশন বাস্তবায়নের সবচেয়ে সহজ ও সম্ভাবনাময় পথ।
কারণ—
Shopify, Amazon, Etsy, eBay-এর মতো প্ল্যাটফর্মে দেশের পণ্য বিক্রি করা যায়
JAMdani, হস্তশিল্প, স্কিন কেয়ার, ফুড, হালাল কসমেটিকস ইত্যাদি বিশ্ববাজারে জনপ্রিয় হতে পারে
ডিজিটাল মার্কেটিং ও লজিস্টিক্স ব্যবস্থাপনায় দক্ষতা বাড়ানো গেলে বিশাল রপ্তানি বাজার গড়ে ওঠা সম্ভব
গ্লোবাল বাংলাদেশ গড়ার জন্য আমাদের দরকার:
Cross-border e-commerce পলিসি
International storefront তৈরি
পেমেন্ট সিকিউরিটি ও শিপিং লজিস্টিক্স উন্নয়ন
৫. আপনি কেন বলছেন যে 'ই-কমার্স ইকোনমি' একটি আন্দোলন হতে পারে?
কারণ ই-কমার্স ইকোনমি কেবলমাত্র একটি বাণিজ্যিক কার্যক্রম নয়, এটি একটি সামাজিক-অর্থনৈতিক রূপান্তর আন্দোলন।
এই খাতে নারীরা ঘরে বসে আয় করছেন, তরুণরা চাকরির পরিবর্তে ব্যবসায় নামছেন, গ্রামীণ উদ্যোক্তা শহরের ক্রেতার কাছে পণ্য পৌঁছাচ্ছেন—এগুলো এককভাবে কোনো অন্য খাতে দেখা যায় না।
একটি ব্যবসা যদি—
রপ্তানির পথ খুলে দেয়,
আয়-বৈষম্য কমায়,
দক্ষতা ও প্রযুক্তি ব্যবহার বাড়ায়,
নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে,
এবং একই সঙ্গে আস্থার সংকট ভেঙে ফেলে—
তাহলে সেটি কেবল অর্থনীতি নয়, একটি জনআন্দোলনের অবয়ব পায়।
আমি এই বিশ্বাস থেকেই ‘ই-কমার্স ইকোনমি’কে বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এক আন্দোলনের রূপ দিতে চাই।
৬. তরুণ প্রজন্মের জন্য আপনার পরিকল্পনা কী?
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তরুণ জনগোষ্ঠী।
তাদের সম্ভাবনাকে ই-কমার্সের সঙ্গে যুক্ত করতে হলে চাই ব্যবহারিক শিক্ষা ও বাস্তব সহযোগিতা।
আমার পরিকল্পনা:
১. Skill-to-Seller Program – ফ্রিল্যান্সার, ডিজাইনার, কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের ই-কমার্স উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলা
২. Digital Founders Hub – স্টোর সেটআপ, পণ্য সোর্সিং, কনটেন্ট, ফটোগ্রাফি, মার্কেটিং—সব এক জায়গায় শেখার ব্যবস্থা
৩. Startup Launchpad – তরুণদের জন্য মাসিক ইনকিউবেশন ওয়ার্কশপ, যেখানে সেরা আইডিয়াগুলো পাবে ইনভেস্টমেন্ট গাইডেন্স
৪. Campus to Commerce – বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ‘ই-কমার্স ক্লাব’ গঠন ও প্রতিযোগিতা আয়োজন
আমার স্বপ্ন—তরুণদের হাত ধরে দেশ হবে ই-কমার্স ইকোনমি।
৭. নারী উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে কী করবেন?
নারীরা হচ্ছেন ঘরে বসে ব্যবসার মাধ্যমে অর্থনীতিকে সচল করার সবচেয়ে সম্ভাবনাময় অংশীদার।
তাদের জন্য আমার প্রস্তাব:
১. Home-based Business Recognition Policy
২. ট্রেড লাইসেন্স ছাড়াই Smart BDID-র মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সুবিধা
৩. নারীবান্ধব কুরিয়ার সেবা ও রিটার্ন সুবিধা
৪. নারী উদ্যোক্তা বিশেষ ব্যাজ ও প্রচারণা ক্যাম্পেইন
৫. নারী উদ্যোক্তা উন্নয়ন ফান্ড ও Soft Skill Training
আমার লক্ষ্য, নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি সহজ, নিরাপদ ও সম্মানজনক ই-কমার্স ইকোসিস্টেম তৈরি করা।
৮. গ্রাহকের আস্থা (Trust) ফেরাতে আপনার রোডম্যাপ কী?
গ্রাহক আস্থা ফিরিয়ে আনা এখন ই-কমার্স খাতের সবচেয়ে জরুরি চ্যালেঞ্জ।
আমার রোডম্যাপ:
১. Verified Seller Accreditation System
২. ডিজিটাল ডিসপিউট রেজোলিউশন বোর্ড (DRB) – যেখানে নিরপেক্ষ তদন্তে দ্রুত সমাধান
৩. গ্রাহকের অভিযোগের সর্বোচ্চ ৩ দিনের মধ্যে সমাধান নীতিমালা
৪. Smart Review & Rating System – যেখানে রিভিউ হবে যাচাইযোগ্য ও নিরপেক্ষ
৫. Trust Score Index – প্রত্যেক বিক্রেতার উপর ট্রাস্ট মেট্রিক্স প্রকাশ
এই পদক্ষেপগুলো থাকলে গ্রাহকের আস্থা ফেরানো সম্ভব, এবং ই-কমার্স হবে বিশ্বাসযোগ্য বিকল্প।
৯. নির্বাচিত হলে আপনার প্রথম ১০০ দিনের অগ্রাধিকার কী হবে?
১. Smart BDID পাইলট চালু ও রেজিস্ট্রেশন ফ্রেমওয়ার্ক প্রস্তুত
২. Trust & Compliance Cell গঠন – গ্রাহক ট্রাস্ট ও ট্রানজেকশন মনিটরিং সেল
৩. e-CAB Dashboard তৈরি – সদস্য ডেটা, সমস্যার ধরণ ও সমাধান অগ্রগতি ট্র্যাকিং
৪. সদস্যদের জন্য Helpline ও Monthly Townhall Meeting চালু
৫. নারী উদ্যোক্তা ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা সাপোর্ট ইউনিট
৬. Cross-border E-commerce কর্মশালা ও রপ্তানি প্ল্যান ঘোষণা
৭. ট্রেনিং ক্যালেন্ডার ও Knowledge Portal চালু
এই ১০০ দিন হবে একটি বাস্তবায়ন অভিযানের সূচনা।
১০. আপনি কি কেবল বড় উদ্যোক্তাদের প্রতিনিধিত্ব করবেন?
না। আমার দৃঢ় অবস্থান হলো—ই-কমার্সের প্রকৃত প্রাণ হচ্ছে ক্ষুদ্র, নারী ও তরুণ উদ্যোক্তারা। তবে, বড় উদ্যোক্তাদের ই-ক্যাবে সংশ্লিষ্ট করতে কাজ করবো।
যারা ফেসবুকে, ইনস্টাগ্রামে, নিজের ওয়েবসাইটে বা লোকাল মার্কেটপ্লেসে ব্যবসা করছেন—তাদের কথা আগে বলা দরকার।
আমার পরিকল্পনায় আছে:
Home-based seller এর জন্য সহজ রেজিস্ট্রেশন
ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসায়ীদের জন্য Training & Transition Program
ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের জন্য Micro-Loan Linkage
নারী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য আলাদা Helpline ও Monthly Support Desk
Local Seller Support Task Force গঠন
সবাইকে নিয়েই হবে e-CAB—এটাই আমার প্রতিশ্রুতি।
১১. ই-কমার্সে পেমেন্ট সিকিউরিটির বিষয়ে আপনার অবস্থান কী?
পেমেন্ট সিকিউরিটি নিয়ে সমস্যা এখন আস্থা সংকটের মূল কারণ।
আমার অবস্থান ও পদক্ষেপ:
১. Escrow System চালু করা – যেখানে টাকা নিরাপদ থাকবে ডেলিভারি পর্যন্ত
২. Dispute Resolution Framework – বিক্রেতা ও ক্রেতা উভয়ের জন্য নিরপেক্ষ সমাধান
৩. রিফান্ড টাইমলাইন বাধ্যতামূলক – সর্বোচ্চ ৫ কার্যদিবসের মধ্যে
৪. পেমেন্ট গেটওয়ে মনিটরিং সেল – যারা অনিয়ম নিরীক্ষা করবে
৫. Customer Awareness Campaign – পেমেন্ট ব্যবস্থার উপর আস্থা বাড়াতে
আমি চাই—পেমেন্ট হোক নির্ভরতার প্রতীক। ই-কমার্সে ট্রানজেকশন মানে যেন হয় 'Trust in Action'।
১২. আপনি ই-কমার্স খাতকে কিভাবে রপ্তানিমুখী করবেন?
বাংলাদেশের হাতে আছে অসাধারণ কিছু পণ্য—Jamdani, Nakshi Kantha, Leather, Jute, Organic Skincare, Halal Food ইত্যাদি।
আমার লক্ষ্য হলো এই পণ্যগুলোকে আন্তর্জাতিক বাজারে পৌঁছে দেওয়া।
পরিকল্পনা:
১. Cross-border E-commerce Cell গঠন – যারা সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে সহায়তা করবে
২. Amazon, Etsy, Shopify’র সাথে সংযোগ তৈরির চুক্তি
৩. International Fulfillment Center Pilot Project
৪. Global Storefront Program – যেখানে একসাথে ৫০০+ বাংলাদেশি পণ্য থাকবে
৫. Training on Product Standardization & Packaging
৬. Government Incentive & Export VAT Exemption প্রস্তাবনা
রপ্তানিমুখী ই-কমার্স গড়াই হবে গ্লোবাল বাংলাদেশ গড়ার একটি প্রধান ভিত্তি।
১৩. আপনার মতে e-CAB এর সংস্কার প্রয়োজন আছে কি?
অবশ্যই আছে।
আমরা একটি সময় পেরিয়েছি যেখানে সদস্যরা সংগঠনের সার্ভিস ও কাঠামোতে আস্থাহীনতায় ভুগেছেন।
আমার প্রস্তাবিত সংস্কার:
১. Member-first Approach – সদস্যদের মতামতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব
২. Data-Driven Decision Making – সদস্যদের তথ্য বিশ্লেষণ করে পদক্ষেপ
৩. e-CAB Complaint Cell ও প্রতিবেদন প্রকাশ
৪. Training & Legal Support Hub গঠন
৫. Technology & Research Wing – যারা তথ্য, পরিসংখ্যান ও গবেষণায় নেতৃত্ব দেবে
৬. একটি Inclusive Advisory Board, যেখানে নারী, তরুণ, SME, এবং Regional প্রতিনিধি থাকবে
সংগঠন হবে সদস্যদের জন্য—এবং সদস্যরাই হবে সংগঠনের চালিকা শক্তি।
১৪. ভিশন ২০৩০ ও ৩১ দফা সংস্কার এবং ই-কমার্স ইকোনমি: এই সংযুক্তি ও রূপরেখা কেমন হবে?
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ঘোষিত ভিশন ২০৩০ এবং ২০২৩ সালের ৩১ দফা রাষ্ট্র সংস্কার রূপরেখা—দুইটি দলীয় দলিলেই যে বার্তাটি স্পষ্ট, তা হলো:
“রাজনীতি হবে জনগণের কল্যাণে, অর্থনীতি হবে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে।”
আমার ৬ দফা নির্বাচনী এজেন্ডা, এবং ‘ই-কমার্স ইকোনমি’ ভাবনাটি এই রাষ্ট্র সংস্কার ও অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে স্বাভাবিকভাবে সম্পৃক্ত।
১৫. আপনি ‘ই-কমার্স ইকোসিস্টেম’ বলতে কী বোঝেন?
ই-কমার্স ইকোসিস্টেম হলো একটি সমন্বিত কাঠামো, যেখানে একজন উদ্যোক্তা অনলাইন ব্যবসার পুরো চেইনটি নিরবিচারে ও নিরাপদভাবে চালাতে পারেন।
এর উপাদানগুলো হলো:
১. ডিজিটাল রেজিস্ট্রেশন ও স্বীকৃতি (Smart BDID)
২. বিশ্বস্ত পেমেন্ট গেটওয়ে ও Escrow সুবিধা
৩. ডেলিভারি ও লজিস্টিকস নেটওয়ার্ক
৪. বিক্রেতা যাচাই ও রেটিং সিস্টেম
৫. উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি সহায়তা
৬. ক্রেতা-প্রতারণা রোধ ও অভিযোগ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা
৭. রপ্তানি সহযোগিতা ও সরকারিভাবে প্রণোদনা সংযোগ
৮. নির্ভরযোগ্য সংগঠন ও নীতিনির্ধারণে অংশগ্রহণ
এই পুরো ইকোসিস্টেম না থাকলে, ই-কমার্স হয় ছিটেফোঁটা ব্যক্তিগত প্রয়াস।
আমার লক্ষ্য—পূর্ণাঙ্গ একটি ই-কমার্স ইকোসিস্টেম গড়ে তোলা যেখানে ব্যবসা হবে টেকসই, ট্রাস্টযোগ্য এবং রপ্তানিমুখী।
১৬. 'ক্রস-বর্ডার ই-কমার্স' এর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
বাংলাদেশের পণ্য আন্তর্জাতিকভাবে বিক্রি করতে গেলে কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ সামনে আসে:
১. পেমেন্ট রিসিভিং সমস্যার সমাধান নেই:
বাংলাদেশে PayPal, Stripe বা আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে নেই।
২. লজিস্টিকস ও শিপিং কাঠামো দুর্বল:
Fulfillment center বা ওয়্যারহাউজ এখনো গড়ে ওঠেনি।
৩. পণ্যের মান ও প্যাকেজিং ঘাটতি:
Global compliance ধরে রাখতে অনেক উদ্যোগীর প্রস্তুতি নেই।
৪. নীতিনির্ধারণী অস্পষ্টতা:
Cross-border policy framework এখনো তৈরি হয়নি।
৫. উদ্যোক্তাদের অভিজ্ঞতা ও প্রশিক্ষণ ঘাটতি:
Amazon, Etsy, Shopify তে ব্যবসা করতে চায়, কিন্তু প্রস্তুতি নেই।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য আমি চাই—
বিশেষ Taskforce
সরকারি সহযোগিতায় নীতিমালা
ই-কমার্স রপ্তানির জন্য অনুদান
এবং e-CAB থেকে Global Seller Development Program
১৭. আপনি কেন বারবার বলছেন 'ই-কমার্স ইকোনমি' গড়তে হবে?
কারণ, ই-কমার্স এখন আর শুধু একটি ‘ব্যবসার মাধ্যম’ নয়—এটি হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের নতুন অর্থনৈতিক স্তম্ভ।
এর সম্ভাবনাগুলো হলো:
ডিজিটাল মাধ্যমে আয় ও কর্মসংস্থান
নারী উদ্যোক্তার ক্ষমতায়ন
দেশীয় পণ্যের রপ্তানি
আয় বৈষম্য হ্রাস
ফিনটেক, কনটেন্ট ও সার্ভিস সেক্টরের প্রবৃদ্ধি
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন পথ
কিন্তু তা হতে হলে দরকার একটি পরিকল্পিত, স্বচ্ছ, প্রযুক্তিনির্ভর এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক কাঠামো।
এই রূপান্তর বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন— একটি স্বপ্ন, একটি নীতিমালা, এবং একটি নেতৃত্ব
আমি সেই নেতৃত্বের দায়িত্ব নিতে চাই—ই-কমার্স ইকোনমির পথ দেখাতে।
১৮. আপনি 'গ্লোকাল ই-কমার্স' বলতে কী বোঝেন?
‘গ্লোকাল’ শব্দটি এসেছে ‘Global’ এবং ‘Local’ এর সংমিশ্রণ থেকে।
‘গ্লোকাল ই-কমার্স’ মানে হলো স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যকে বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছে দেওয়া, কিন্তু স্থানীয় সংস্কৃতি, মান ও মূল্যবোধ বজায় রেখে।
বাংলাদেশে এর প্রয়োগ হতে পারে:
Jamdani, Nakshi Kantha, হস্তশিল্প, মধু, হালাল কসমেটিকস ইত্যাদি পণ্য Amazon, Etsy বা Shopify-তে বিক্রি করা
স্থানীয় কনটেন্ট, ব্র্যান্ড নাম, ভাষা ও প্যাকেজিং ব্যবহার করে
দেশের SME-দের Global Storefront গড়ে তুলে
গ্লোকাল ই-কমার্স একটি নতুন দিগন্ত—যেখানে বাংলাদেশি পণ্য বৈশ্বিক হতে পারে, কিন্তু চেতনায় থেকে যাবে দেশীয়।
১৯. আপনি যদি নেতৃত্বে আসেন, সদস্যদের কণ্ঠস্বর কীভাবে শুনবেন?
আমি বিশ্বাস করি—সদস্যের কণ্ঠস্বরই সংগঠনের প্রান।
তাদের সমস্যা, অভিজ্ঞতা ও প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংগঠন পরিচালিত হওয়া উচিত।
তাই আমি বাস্তবায়ন করবো:
১. Monthly Townhall Meeting – সদস্যদের সরাসরি মতামত নেওয়া
২. Member Suggestion Box (ডিজিটাল ও অফিসে)
৩. Complaint Dashboard with Response Time Tracking
৪. Member-led Advisory Board, যেখানে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি থাকবেন
৫. Annual Member Feedback Report – সংগঠনের কর্মক্ষমতা মূল্যায়নে সদস্যদের মূল্যায়ন প্রকাশ
এএম