জিআই পণ্যের তালকায় দিনাজপুরের বেদেনা লিচু 

জিআই পণ্যের তালকায় দিনাজপুরের বেদেনা লিচু 

দিনাজপুর প্রতিনিধি:

Published : ১৫:৪৮, ৮ মে ২০২৫

লিচুর নাম শুনলেই সবার আগে দিনাজপুরের কথা মনে পড়ে। দিনাজপুর জেলার বেদেনা জাতের লিচুকে বলা হয় ‘লিচুর রাজা’। স্বাদ, গন্ধ, রস ও মিষ্টতায় অনন্য এই লিচু এবার পেয়েছে ভৌগোলিক নির্দেশক বা জিআই পণ্যের স্বীকৃতি। 

গত ৩০ এপ্রিল দিনাজপুরের বেদেনা লিচু জিআই পণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। দীর্ঘদিনে এই স্বীকৃতি পাওয়ায় আনন্দিত কৃষক ও বাগান মালিকরা। তবে তারা শুধু স্বীকৃতি নয়, লিচু বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ দেখতে চান।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে বিদেশে রপ্তানিযোগ্য লিচু উৎপাদনে কাজ চলছে। দিনাজপুর সদর উপজেলার মাসিমপুর ও বিরল উপজেলার মাধববাটি এলাকাকে বেদেনা লিচুর প্রধান উৎপাদন এলাকা হিসেবে ধরা হয়। এই অঞ্চলের উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া লিচু উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।

সরেজমিনে মাসিমপুর এলাকায় দেখা যায়, গাছের পাতার ফাঁকে থোকা থোকা লিচু ঝুলছে, যেগুলোতে লালচে রঙ ধরতে শুরু করেছে। 

কৃষকরা জানিয়েছেন, আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যেই লিচু পরিপক্ক হয়ে বাজারজাত শুরু হবে। মাঠপর্যায়ে এখন চলছে পরিচর্যা, পানি সেচ ও কীটনাশক স্প্রে। 

বাগান মালিক আলতাফ হোসেন বলেন, বেদেনা লিচু স্বীকৃতি পেয়েছে—এটা আমাদের জন্য গর্বের। এতে বিদেশি আগ্রহ বাড়বে, দেশের সুনাম হবে, কৃষকেরাও লাভবান হবে। তবে শুধু স্বীকৃতিতে সীমাবদ্ধ না থেকে রপ্তানির সুযোগ তৈরি করতে হবে। 

মুক্তিযোদ্ধা ও লিচু চাষি আকবর আলী বলেন, স্বীকৃতি পাওয়াটা অনেক বড় অর্জন। লিচু রপ্তানি শুরু হলে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে। কৃষি কর্মকর্তারা আরও সহযোগিতা করলে মানসম্মত উৎপাদন বাড়বে। 

বাগান মালিক মোকসেদুল হক বলেন, এখানে প্রতি পিস লিচু ৭-৮ টাকায় বিক্রি হয়, ঢাকায় একটু বেশি। বিদেশে রপ্তানি হলে এখান থেকেই ১১-১২ টাকা দামে বিক্রি করতে পারবো। এতে আমরা লাভবান হবো, দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আবদান রাখবে। বাজারে লিচুর সরবরাহ বেশি হলে দাম কমে যায়, রপ্তানি হলে সে সমস্যা থাকবে না। হিমাগার নির্মাণ হলে আরও সুবিধা হবে। 

উলিপুর এলাকার কৃষক আলমাস ইসলাম বলেন, জিআই স্বীকৃতি আমাদের জন্য বড় অর্জন। যদি এই লিচু আন্তর্জাতিক মানে প্রক্রিয়াজাত করে রপ্তানি করা যায়, তাহলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হবে। দেশের ডলার সংকট মোকাবিলায় কৃষকরাও ভূমিকা রাখতে পারবে। তবে কৃষকের মাধ্যমেই রপ্তানি হওয়া উচিত, যেন মধ্যস্বত্বভোগীরা লাভবান না হয়। 

দিনাজপুর হর্টিকালচার সেন্টারের উদ্যানতত্ত্ববিদ কৃষিবিদ ইমরুল আহসান বলেন, বেদেনা লিচু জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় দিনাজপুরের কৃষকদের অভিনন্দন। এই পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে মান বজায় রেখে রপ্তানি করতে হবে। কৃষি বিভাগের পার্টনার প্রকল্পের মাধ্যমে গ্যাপ প্রটোকল মেনে, কীটনাশকের ব্যবহার সীমিত রেখে এবং স্ট্যান্ডার্ড বজায় রেখে রফতানিযোগ্য লিচু উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা চাই, দিনাজপুরের এই বিশেষ পণ্য সারা বিশ্বে পরিচিত হোক। এর মাধ্যমে কৃষক, বাগান মালিক এবং দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন সম্ভব। চীন ও ভারতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হলে আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিত করেই রপ্তানি করতে হবে। সব মিলিয়ে, বেদেনা লিচুর জিআই স্বীকৃতি দিনাজপুরবাসীর জন্য গর্বের। এখন দরকার কার্যকর রপ্তানি উদ্যোগ ও কৃষকদের প্রণোদনা— যা দিনাজপুরকে বিশ্ব বাজারে লিচুর জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম করে তুলবে। 

বিডি/ও

শেয়ার করুনঃ
Advertisement